আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার
আমি পুরো প্রক্রিয়াটি ভুল হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। লেখা ছাপার সঙ্গে রিভিউয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ডিন অফিস ও সম্পাদনা পরিষদ দায়ী হলেও এককভাবে জোর করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের এমন ষড়যন্ত্রের রায় মানি না। এ কারণে কোর্টে যাব। আশা করি, সেখানে ন্যায়বিচার পাব…
সামিয়া রহমান, জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক। প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদাবনতি করা হয়েছে। এরপর থেকে গণমাধ্যম, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে নিয়ে চলছে সরগরম আলোচনা। সামিয়া রহমানও একাধিক বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় খোলাসা করেন কীভাবে তিনি এ ষড়যন্ত্রের শিকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নূর মোহাম্মদ।
ঢাকা পোস্ট : নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের পর পদাবনতি। আপনি বলছেন, ‘ষড়যন্ত্র’। আদালতে যাওয়ার কথাও বলেছেন বিভিন্ন সময়ে। বিষয়টির শুরু থেকে যদি বলতেন…
সামিয়া রহমান : ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আমার ও মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ নামক যে লেখাটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ‘রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়, সেই লেখার আইডিয়া ছিল কেবল আমার। পরবর্তীতে জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল আমার অগোচরে। প্রকাশিত লেখার মূল অথর (লেখক) আমি হলেও ডিন অফিসে জমা, রিভিউয়ারের কপি; কোনো কিছুতেই আমার স্বাক্ষর ছিল না। পুরো প্রক্রিয়াটি করেছে কো-অথর সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান। সে আমার প্রাক্তন ছাত্র, পরবর্তীতে অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষায় অধ্যয়নরত।
তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে কাজ করেনি। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা দুই বছর দীর্ঘায়িত করেছে শুধু সময়ের অপেক্ষা আর মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
আমি পুরো প্রক্রিয়াটি ভুল হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। লেখা ছাপার সঙ্গে রিভিউয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ডিন অফিস ও সম্পাদনা পরিষদ দায়ী হলেও এককভাবে জোর করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের এমন ষড়যন্ত্রের রায় মানি না। এ কারণে কোর্টে যাব। আশা করি, সেখানে ন্যায়বিচার পাব।
ঢাকা পোস্ট : বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছে, তারপর তো শাস্তি হলো…
সামিয়া রহমান : আমি প্লেজারিজম করেছি, এর কোনো দালিলিক প্রমাণ তদন্ত কমিটি দেখাতে পারেনি। তারপরও জোর করে আমাকে জড়িয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলছে, আমি নির্দোষ। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মারজান নিজে বলছে, সে লেখা জমা দিয়েছে। তারপরও আমাকে জড়ানো হয়েছে। যখন দেখলাম পুরোটাই ষড়যন্ত্র তখন কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।
ঢাকা পোস্ট : ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু একই অপরাধে শাস্তি পাওয়া অন্যদের নিয়ে তেমন আলোচনা নেই, কেন?
সামিয়া রহমান : এমন অভিযোগে অনেকেই দোষী সাব্যস্ত হলেও আমাকে নিয়ে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি আলোচনা। এর একমাত্র কারণ আমি সামিয়া রহমান। একই সময় (২০১৭ সালে) প্লেজারিজমের দায়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। তাদের নাম তো কেউ বলে না।
আমার পরিকল্পনা ও গ্রন্থনায় টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এসব সাফল্য আমার বিভাগের শিক্ষকদের একটি অংশে ভয়ঙ্কর ঈর্ষা তৈরি করেছে
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
আমার সঙ্গে আরেকজনের পদাবনতি হয়েছে, তার নাম কিন্তু মিডিয়ায় ওইভাবে আসছে না। আমার নামটা বেশি আসার কারণ, আমি মিডিয়াতে আছি। এতে অনেক মানুষ জেলাসি ফিল (প্রতিহিংসাপরায়ণ) করে। আমার অনেক এনিমি (শত্রু) তৈরি হয়েছে। টেলিভিশনে আমি যখন পলিটিক্যাল (রাজনীতি) বিষয় নিয়ে কথা বলি তখন অনেক শত্রু তৈরি হয়।
তবে এসব আলোচনায় আমি আতঙ্কিত নই, কষ্ট পাই না। প্রথমদিকে পেয়েছিলাম। পরে আমার কাছে মনে হলো, মশা-মাছিকে আসলে গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। যারা নোঙরা সমালোচনা করছে তারা হিংসাপরায়ণ হয়ে করছে। তবে এর বেশির ভাগই ফেক আইডি। তারা আমার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত, হিংসায় মরে যাচ্ছে। কারণ তাদের দুনিয়াটা এত ছোট যে মানুষের ক্ষতি, হিংসা করা ছাড়া তাদের বেঁচে থাকার আর কোনো জগৎ নেই। কিন্তু আমার জীবনে দুটি সন্তান, পরিবার আছে। যারা আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করে। তাদের জন্য বাঁচব। আমি ঈর্ষাকাতর প্রাণীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চাই না।
ঢাকা পোস্ট : ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। এর পেছনে কোনো ব্যাখ্যা আছে কিনা?
সামিয়া রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিন, যিনি প্লেজারিজমের দায়ে অভিযুক্ত; তাকে নিয়ে তো কোথাও আলোচনা নেই। তিনিই আবার আমার প্লেজারিজমের রায় দিচ্ছেন। তার কি এ রায় দেওয়ার অধিকার আছে?
আমার সাবেক সহকর্মী, যাদের আমি বিভিন্ন মিডিয়ায় চাকরি দিয়েছি, তারাই সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আজেবাজে কমেন্ট করছে। আসলে মানুষের মানসিকতা বড় ব্যাপার। পরিবার-শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
মিডিয়ায় আসার পর থেকেই আমি টার্গেট শিকার। বর্তমান প্রশাসনে আছেন এমন একজন শিক্ষক, একদিন আমাকে ডেকে বলেছিলেন, প্রাক্তন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের বেনিফিশায়ারি (সুবিধাভোগী) হিসেবে আপনাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আপনাকে অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। আপনার প্রতি তাদের অনেক আক্রোশ। আপনি মিডিয়ায় অনেক ওপরে আছেন। আপনি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারেন। মিডিয়ার তো অনেক ক্ষমতা। এজন্য আপনার একটি শত্রুবলয় তৈরি হয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি তো আরেফিন স্যারের বেনিফিশিয়ারি নই। আমি স্যারের সময় কি বিদেশে স্কলারশিপ নিয়েছি, হাউজ টিউটর হয়েছি, প্রক্টর বা প্রভোস্ট হয়েছি?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার প্রতি অন্যায় করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমি কোর্টে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেইনি। আমি যদি ঘটনাটি ঘটাতাম, তাহলে আমি এটা মেনে নিতে পারতাম। যে অন্যায় আমি করেনি সেটা কেন মেনে নেব?
ঢাকা পোস্ট : আরও তো লোক আছে। আপনাকে নিয়েই কেন এই ষড়যন্ত্র?
সামিয়া রহমান : পুরো ঘটনাটির ধাপে ধাপে আমি ষড়যন্ত্র দেখছি, সেটা তো আমি মেনে নিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কিছু মানুষ মনে করে আমার পতন হলে তারা আনন্দ পাবে, আরেফিন স্যারের একটা অনুসারীর ধ্বংস হবে। আরেফিন স্যার আমার শিক্ষক ছিলেন। আগে থেকেই তাকে শ্রদ্ধা করি, ভবিষ্যতেও করব। যারা এসব ষড়যন্ত্র করছে তাদের শিক্ষক তো নয়, আমি মানুষ হিসেবও গণ্য করি না।
শিক্ষক রাজনীতির এ খেলা এভাবে হবে, তা আমার ধারণা ছিল না। আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে, সেটার বিরুদ্ধে আমি ফাইট করব
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির শিকার আমি। নীল দলের নমিনেশনে আমাকে ভোট দিতে দেয়নি বর্তমান একজন ডিন। সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার সে অধিকার ছিল কিন্তু সেটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা পোস্ট : আপনি কি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির শিকার?
সামিয়া রহমান : বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি না করলে প্রমোশন হবে না। আমার সমস্যা ছিল, সক্রিয় ওই নোঙরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, এটুকুই আমার অবস্থান।
ভিসি স্যার (মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান) কেন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন না। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বারবার বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের যে সিদ্ধান্ত তা মওকুফ করা যায়, লঘু করা যায় কিন্তু বাড়ানো যায় না। কিন্তু ভিসি স্যার কেন এটা নিয়ে কথা বলছেন না? কারণ, শিক্ষক সমিতির একটা রাজনীতি এখানে জড়িত। ভোটের ব্যাপার আছে। পুরোটাই ভোটের রাজনীতির খেলা, ষড়যন্ত্র। সে ষড়যন্ত্রের মধ্যে আমাকে ফেলানো হয়েছে।
শিক্ষক রাজনীতির এ খেলা এভাবে হবে, তা আমার ধারণা ছিল না। আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে, সেটার বিরুদ্ধে আমি ফাইট করব।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বারবার বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের যে সিদ্ধান্ত তা মওকুফ করা যায়, লঘু করা যায় কিন্তু বাড়ানো যায় না। কিন্তু ভিসি স্যার কেন এটা নিয়ে কথা বলছেন না? কারণ, শিক্ষক সমিতির একটা রাজনীতি এখানে জড়িত। ভোটের ব্যাপার আছে
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
ঢাকা পোস্ট : ষড়যন্ত্র, শাস্তি; এরপরও কোনো সুখস্মৃতি…
সামিয়া রহমান : ক্লাসে সবাই আমাকে জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে চিনে। আমি সবসময় শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয়। ফুল অ্যাটেনডেন্ট (উপস্থিতি) থাকে আমার ক্লাসগুলো। গত বছর অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে এক শিক্ষার্থী বলেছিল, আমি এ বিভাগে ভর্তি হয়েছি শুধু সামিয়া ম্যাডামের জন্য। ওই সময় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অনেকেই ওই জায়গা থেকে উঠে গিয়েছিল। এমন জনপ্রিয় আমি। ছাত্র-ছাত্রীরা দেশ-বিদেশ থেকে এখনও মেইল করে, ম্যাসেজ দেয়। বলে, ম্যাডাম আমরা আপনার পাশে আছি। কী করতে হবে শুধু বলেন।
আমি অজস্র শিক্ষার্থীকে চাকরি দিয়েছি। তারা আমাকে খুব সম্মান করে। স্কলারশিপ দিয়ে হোক, চাকরি দিয়ে হোক কিংবা আইডিয়া দিয়ে হোক, তাদের সাহায্য করেছি। এটা আমার দায়িত্ববোধ থেকে করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি না করলে প্রমোশন হবে না। আমার সমস্যা ছিল, সক্রিয় ওই নোঙরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, এটুকুই আমার অবস্থান
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
এই জনপ্রিয়তা আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন এমন অভিযোগ উঠছে তখন তো এত প্রচার হচ্ছে না।
ঢাকা পোস্ট : পদাবনতি হয়েছে, এখন সময় কাটছে কীভাবে?
সামিয়া রহমান : পদাবনতি হওয়ার পরও আমি নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। কারণ, ছাত্র-ছাত্রীরা সব জানে। এ ঘটনার পর তাদের সামনে মাথা নিচু হওয়ার মতো কিছু হয়নি। তারা তো সবই জানে। আমি কখনও সহযোগী বা সহকারী হিসেবে নয়; সবসময় শিক্ষক হিসেবে তাদের সামনে যাই। ভবিষ্যতে এ হিসেবে যাব।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার প্রতি অন্যায় করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমি কোর্টে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেইনি
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
ঢাকা পোস্ট : সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার অনেক সহকর্মীও সমালোচনামুখর ছিলেন। তাদের বিষয়ে কী বলবেন?
সামিয়া রহমান : আমার সাবেক সহকর্মী, যাদের আমি বিভিন্ন মিডিয়ায় চাকরি দিয়েছি, তারাই সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আজেবাজে কমেন্ট করছে। আসলে মানুষের মানসিকতা বড় ব্যাপার। পরিবার-শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা এসব আজেবাজে মন্তব্য করছে তাদের তো ওই লেভেলটা নাই। আমার কাছে মনে হয়েছে, যারা চারপাশে প্রতিহিংসা নিয়ে বসবাস করে তারা মশা-মাছির মতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিন, যিনি প্রেজারিজমের দায়ে অভিযুক্ত; তাকে নিয়ে তো কোথাও আলোচনা নেই। তিনিই আবার আমার প্লেজারিজমের রায় দিচ্ছেন। তার কি এ রায় দেওয়ার অধিকার আছে
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমার পরিকল্পনা ও গ্রন্থনায় টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এসব সাফল্য আমার বিভাগের শিক্ষকদের একটি অংশে ভয়ঙ্কর ঈর্ষা তৈরি করেছে। ২০১৬ সালে অষ্টম পে-স্কেল ইস্যুতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব বাধে। ওই সময় আমি বিভিন্ন মিডিয়ায় শিক্ষকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছি। এটাতেও অনেকে জেলাসি ফিল করেছে।
ঢাকা পোস্ট : তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কমিটির দুজন সদস্যের প্রতিও অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন। শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার পরও কেন এমনটি হলো?
আমার জীবনে দুটি সন্তান, পরিবার আছে। যারা আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করে। তাদের জন্য বাঁচব। আমি ঈর্ষাকাতর প্রাণীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চাই না
সামিয়া রহমান, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও শিক্ষক
সামিয়া রহমান : আমার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল তা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে কাজ করেনি। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা দুই বছর দীর্ঘায়িত করেছে শুধু সময়ের অপেক্ষা আর মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য।
কমিটির কার্যক্রম গোপনীয় হওয়া সত্ত্বেও কমিটির কোনো কোনো সদস্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে প্রতিটি মিটিং শেষ হওয়ার পরই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভুয়া ও উস্কানিমূলক তথ্য সরবরাহ করতো। তদন্ত কমিটি দুই বছরের অধিক সময় তদন্ত করে মূলত মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে আমাকে দোষী করার চেষ্টা করেছে। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটির দুজন সদস্যের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠিও দেই। কিন্তু সে চিঠি আমলে নেওয়া হয়নি।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ‘রিভিউ’ জার্নালে সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথ আট পৃষ্ঠার নিবন্ধন ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ প্রকাশিত হয়। অভিযোগ ওঠে, ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’-তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল করা হয়েছে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ওই চুরির কথা জানায় ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা মিলেছে। তবে কমিটি কোনো শাস্তির সুপারিশ করেনি।
সামিয়া-মারজানের শাস্তি নির্ধারণের জন্য গত বছরের অক্টোবরে সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ইনক্রিমেন্ট কাটার মতো ‘লঘু শাস্তির’ সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেট তা নাকচ করে দিয়ে তাদের পদাবনতি করে...
(চলবে...)
এনএম/এমএআর