কাঁদতে কাঁদতে শ্বশুরকে নিয়ে যা বললেন নায়ক রিয়াজ
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান (৫৮)। যিনি ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজের শ্বশুর। হঠাৎ শ্বশুরের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন রিয়াজ।
ধানমন্ডির বাসা থেকে আবু মহসিন খানের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সেখানে যান রিয়াজ। মর্গ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন তিনি।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে রিয়াজ বলেন, 'আপনারা আমার বাবার (শ্বশুর) জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। বেহেশত নসিব করেন। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারছি না।'
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বাদ আসর ধানমন্ডি ৭ নম্বর মসজিদে উনার জানাজা হবে। তারপর উনার ওসিয়ত মোতাবেক মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের ওখানে যে কবরস্থান আছে ওখানে তাকে আমরা দাফন করব।’
আত্মহত্যা করার আগে ফেসবুক লাইভে মহসিন খান বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি, আমার বয়স ৫৮ বছর, কোনো একসময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। এখন আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আজকের লাইভে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানানো। এ অভিজ্ঞতা থেকে আপনারা হয়ত অনেক কিছু জানতে পারবেন, সাবধানতা অবলম্বন করবেন। গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। ওনার একটিমাত্র ছেলে, কিন্তু মা মারা যাওয়ার খবরে পেয়েও সে দেশে আসেনি। এ বিষয়টি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। আমার একটা ছেলে আছে, সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে, আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়ে থাকি, আমার মনে হয় না এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা কিছু করি, সবই পরিবার ও সন্তানের জন্য। একবার চিন্তা করে দেখেন, নিজের আয় করা অর্থের ২০ শতাংশও নিজের জন্য ব্যয় করেন না। করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, তা যারা একা থাকেন তারাই জানেন। আমার আর পৃথিবীর প্রতি, পৃথিবীর মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা নেই। কারণ যাদের জন্য আমি বেশি করেছি, তাদের কাছ থেকেই আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল বাবুল, যাকে আমি নিজে না খেয়ে খাইয়েছি। সে আমার প্রায় ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে। এভাবে আমি বিভিন্ন মানুষের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো পাই। সবশেষ আমি নোবেল নামে একজনকে বিশ্বাস করি। যাকে আমি মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্টের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই বছরেও সেই প্ল্যান্টের যন্ত্র সে কেনেনি। পরে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে, ঝগড়া হয়। এরপর সে দুই দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা সে আমাকে দিচ্ছে না। মানুষ কেন এতো লোভী হয়?’
লাইভের এক পর্যায়ে এসে তিনি ছেলে-মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। তারপর লাইভের ১৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মাথায় তিনি আত্মহত্যা করেন। তার আত্মহত্যা করার পরও প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই লাইভ চলমান থাকে।’
আরআইজে