বিষাদের ২০২১: আমরা যাদের ভুলব না
পৃথিবীরা গাছের মতন। মানুষগুলো পাতা। কচি কুঁড়ি হয়ে বেড়ে ওঠা। এরপর পরিপক্ব পাতায় রূপ নেওয়া। একটা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে আবার ঝরে পড়া। এভাবে চক্রাকারে চলে মানুষের আসা-যাওয়াও।
২০২১ সাল শেষ প্রান্তে। পেছনে ফিরে তাকালে অনেক কিছুই দেখা যায়। ভালো-মন্দের উত্থান-পতন যেমন ছিল, তেমনই ছিল বিষাদময় কিছু প্রয়াণ। যারা নিজ কর্মগুণে দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করেছেন। এক নজরে জেনে নেওয়া যাক তাদের সম্পর্কে, এ বছরটিতে আমরা যাদেরকে হারিয়ে ফেলেছি চিরতরে, যারা থেকে যাবেন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণালী অধ্যায় হয়ে…
এ টি এম শামসুজ্জামান
দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে ২১-এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু। ৮০ বছরের জীবনকে কতখানি বর্ণিল আর অর্থবহ করে তোলা যায়, তার অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। অভিনেতা, লেখক, পরিচালক নানা ভূমিকায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদকসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন বরেণ্য এ অভিনেতা।
কবরী
ঢাকাই সিনেমার মিষ্টি মেয়ে ছিলেন তিনি। কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হয়েছিলেন একাধিক প্রজন্মের আদর্শ। সেই কবরী চলে গেলেন এ বছরের ১৭ এপ্রিল। মহামারি করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। সিনেমার মানুষের চোখ ভাসল অশ্রুতে, হৃদয় কাঁদল হাহাকারে। কবরী নামে সুপরিচিত হলেও তার আসল নাম মিনা পাল। ষাটের দশকে সিনেমায় অভিষেক। এরপর লম্বা এক পথচলা। অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় অভিনয়। দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি। রাজনীতিতেও ছিল তার বিচরণ। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৮ সাল থেকে।
ফকির আলমগীর
এ বছরের ২৩ জুলাই থেমে যায় প্রতিবাদের বিপ্লবী কন্ঠস্বর। দেশের গণসংগীতে যিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন, সেই ফকির আলমগীর। মৃত্যুর কারণ সেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ৭১ বছরের জীবনে তিনি নিজেকে এক মহান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের এই কণ্ঠসৈনিক ১৯৯৯ সালে পেয়েছিলেন একুশে পদক।
মিতা হক
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে তার ছিল অসামান্য খ্যাতি। সংগীতানুরাগীদের কাছে মিতা হক নামটি অতিপরিচিত ছিল। করোনার থাবায় ভর্তি হন হাসপাতালে। এরপর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও জীবনের পথ আর দীর্ঘ হয়নি। হার্ট অ্যাটাকে গত ১১ এপ্রিল মারা যান গুণী এই শিল্পী। প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীত কণ্ঠে ধারণ করা মিতা হক ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।
ওয়াসিম
ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার সিনেমায় ওয়াসিম ছিলেন অনন্য। সত্তর ও আশির দশকে দারুণ জনপ্রিয়তা ছিল তার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ এপ্রিল মারা যান তিনি। ৭১ বছরের জীবনে তিনি দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।
ড. ইনামুল হক
দেশের অভিনয় জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. ইনামুল হক মারা যান গত ১১ অক্টোবর। পেশাগত জীবনে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক। এর বাইরে তিনি অভিনয়ে ছড়িয়ে গেছেন অপার মুগ্ধতা। মঞ্চ নাটক, টিভি নাটক ও সিনেমায় তার সাবলীল অভিনয় এখনো দর্শকের চোখে ভাসে। এছাড়া লেখক হিসেবেও তিনি সুনাম কুড়িয়েছিলেন। নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০১২ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন খ্যাতিমান এ অভিনেতা।
মাহমুদ সাজ্জাদ
শোবিজের সদা হাস্যোজ্বল, মিষ্টভাষী মানুষ ছিলেন মাহমুদ সাজ্জাদ। তার দক্ষ অভিনয় সমৃদ্ধ করেছে নাট্যাঙ্গন। কলেজ জীবন থেকে মঞ্চনাটকে যুক্ত হন তিনি। এরপর টিভি নাটকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করে গেছেন দীর্ঘদিন। গত ২৪ অক্টোবর মৃত্যুর কাছে নিজেকে সঁপে দেন তিনি।
কেআই