৪৫ বছর পর ঋষিজের নতুন সভাপতি
১৯৭৬ সালে দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী’ গড়ে তোলেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। গত ২৩ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৫ বছর সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন তিনি। ফলে সংগঠনটি সভাপতি শূন্য হয়ে পড়ে। সম্প্রতি সব সদস্যের সম্মতিতে সংগঠনটির সভাপতির পদ পেয়েছেন ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর।
মোট ৩৪ সদস্যের কমিটি তৈরি হয় ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর আগামী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। এই কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকির আলমগীরপুত্র ফকির মাশুক আলমগীর (রাজিব)। সাধারণ সম্পাদক হলেন সমর বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন সালাম শামীম। ২৯ অক্টোবর ঋষিজের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন সভাপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
নতুন সভাপতি সুরাইয়া আলমগীর গণমাধ্যমকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এটি ফকির আলমগীরের প্রাণের সংগঠন। দেশের যেকোনও ক্রান্তিকালে ঋষিজ এগিয়ে গেছে। আমি মনে করি, ঋষিজ ফকির আলমগীর আরেকটি সন্তান। এই সংগঠনটিকে তিনি লালন-পালন করে এতদূর নিয়ে এসেছেন। তার প্রয়াণে আমাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয় সব সদস্যের সম্মতিক্রমে। সবার অনুরোধে আমি দায়িত্বটি নিয়েছি বটে, তবে এটা আমার জন্য দুঃসাহসের মতো। কারণ, তার মতো গুণী-বিচক্ষণ সংগঠক আমি নই। আমার স্বপ্ন ফকির আলমগীরের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে সংগঠনটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া’।
ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর নবনির্বাচিত কমিটিতে স্থান পাওয়া ফকির আলমগীর পরিবারের অন্য সদস্যরা হলেন, ফকির সিরাজ, হাসান আলমগীর রাহুল, আশেক আলমগীর, ফকির মিজানুর রহমান, ফকির জাহিদ হাসান, তামজিদুর রহমান ও লুৎফুর রহমান শাহীন।
উল্লেখ্য, ফকির আলমগীর একজন কণ্ঠযোদ্ধা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। ষাটের দশক থেকেই গণসংগীত গেয়ে আসছিলেন তিনি। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অসামান্য ভূমিকা রাখেন এই গায়ক।
স্বাধীনতার পর ফকির আলমগীর পপ ঘরানার গানে যুক্ত হন। পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে বাংলার লোকজ সুরের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি বহু গান করেছেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে।
গত ১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। ১৫ জুলাই সন্ধ্যা থেকে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
আরআইজে