হাবিব ওয়াহিদের স্মৃতিতে আইয়ুব বাচ্চু
‘এই রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাবো দূরে বহুদূরে’- গিটারের ছয় তার ও উদাত্ত কণ্ঠে এ গান যিনি গেয়েছিলেন, তিনি আইয়ুব বাচ্চু। গানের কথার ব্যত্যয় না ঘটিয়ে তিনি চলে গেছেন। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি যাত্রা করেন অনন্তলোকে। রেখে যান এক বর্ণাঢ্য সংগীত জীবন। যেখানে রয়েছে অসংখ্য কালজয়ী গান, জাদুকরি গিটারের সুর, আর তারুণ্যের জন্য সীমাহীন ভালোবাসা।
আজ গিটার জাদুকরের চলে যাওয়ার দিন। এই দিনে তাকে স্মরণ করেছেন, ভালোবাসা জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় সংগীত তারকা হাবিব ওয়াহিদ। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি জানালেন কিছু স্মৃতি…
মনের দরজা খুলে হাবিব ফিরে গেলেন নব্বই দশকের একেবারে প্রথম দিকে। বলতে লাগলেন, ‘তখন আমার বয়স ১২ কিংবা ১৩ বছর হবে। এলআরবির প্রথম ডাবল অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। সেই অ্যালবামের ‘চলো বদলে যাই’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। গানটির ভিন্ন সাউন্ড, গিটারের প্লেয়িং শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হলো, আমি গানটা শুনেছিলাম খুব ভালো মানের সাউন্ড সিস্টেমে। আমার একজন ফুফা এসব ব্যাপারে খুব সৌখিন ছিলেন। তার বাসায় উন্নত মানের সাউন্ড সিস্টেম ছিল। সেখানেই গানটা শুনেছিলাম। এক্ষেত্রে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। কারণ আমি তার গানগুলো এভাবে শুনতে পেরেছিলাম।’
স্কুল জীবনের গল্প টেনে হাবিব বললেন, ‘তখন বামবার কনসার্ট ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আমিও সেই কনসার্টগুলোতে যেতাম। সরাসরি আইয়ুব বাচ্চুর গান ও অসাধারণ গিটার পরিবেশনা দেখেছি। এটা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।’
হাবিব ওয়াহিদ সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর বহুবার আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। সেই ঘটনাগুলোর রেশ এখনো রয়ে গেছে হাবিবের মনে। তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে, আমাকে অনেক উৎসাহ দিতেন। স্নেহ করতেন। তার হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছিল আমার। সে সময় আমাকে ভালো ভালো পরামর্শ দিয়েছেন।’
আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে গানের কাজও করেছিলেন হাবিব ওয়াহিদ। যেটা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। একটি প্রচারণামূলক প্রোজেক্টে হাবিবের সংগীতায়োজনে কণ্ঠ দেন আইয়ুব বাচ্চু। তখনই তার কণ্ঠ একেবারে কাছ থেকে শুনতে পান। সেই রেকর্ডিংয়ের স্মৃতি হাতড়ে হাবিব বলেন, ‘একজন কম্পোজার হিসেবে যখন আমরা কোনো শিল্পীর ভয়েস রেকর্ড করি, তখন তার ভয়েসের একদম কাছে চলে যাই। একদম মৌলিক কণ্ঠস্বরটা আমরা শুনতে পারি। আমার মনে আছে, আইয়ুব বাচ্চু যখন গাইছিলেন, তখন যেন স্পিকারটা ফেটে বের হয়ে আসবে! এতো পাওয়ারফুল ছিল তার ভয়েস। তখন আমি আবারও উপলব্ধি করি যে, এই মানুষটির জন্য মানুষ খামাকা এত পাগল না। তার ভয়েসের মধ্যে একটা মৌলিকতা আছে। অনেকে তো তাকে একজন ভালো গিটারিস্ট হিসেবে সম্মান করেন। তবে আমি মনে করি, গিটারিস্টের পাশাপাশি কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও তিনি অসাধারণ ছিলেন।’
আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে হাবিব ওয়াহিদের পরিচয়, আলাপ, সাক্ষাৎ; সবই গান সংক্রান্ত। হাবিবের ভাষ্য, ‘আমি যেমন তাকে গান দিয়ে চিনেছি, তার ভক্ত হয়েছি। তিনিও আমার কাজের মাধ্যমে আমাকে চিনতেন। তার চোখে-মুখে আমার জন্য একটা ভালোলাগা, স্নেহ দেখতাম আমি। শৈশব-কৈশোরে তার গান আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আর আমাকে চেনার পর তিনি সরাসরিই উৎসাহ-উদ্দীপনা দিতেন। সবসময় একটা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকতেন এবং সেটা ছড়িয়ে দিতেন।’
আলাপের শেষ পর্যায়ে এসে আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাবিব ওয়াহিদ বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এমন একটি নাম, যার অবদান অস্বীকার করা তো যাবেই না, কখনো ভোলাও যাবে না।’
কেআই/আরআইজে