চলে গেলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক সমীর কুশারী
প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক ও শিক্ষক সমীর কুশারী আর নেই। রোববার (১০ অক্টোবর) সকাল পৌনে সাতটায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ঢাকা পোস্টকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সমীর কুশারীর সহকর্মী, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ড. আফজাল হোসেন।
পরিবারের বরাত দিয়ে ড. আফজাল জানান, করোনা পরবর্তী জটিলতায় সমীর কুশারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বর্ণযুগের এই চিত্রগ্রাহক গত মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ড. আফজাল জানান, সমীর কুশারীর মরদেহ তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ টেলিভিশনের রামপুরা কার্যালয় ও সর্বশেষ কর্মস্থল দেশ টিভি প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়।
সমীর কুশারীর ছাত্র ও দেশ টিভিতে তার সহকর্মী ম্যাক সাব্বির ঢাকা পোস্টকে জানান, দুপুর দুইটার দিকে দেশ টিভি প্রাঙ্গণ থেকে সমীর কুশারীর মরদেহ তার আদিবাসভবন পুরান ঢাকায় নেওয়া হয়। তার আগে দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর দেশ পরিবারের পক্ষ থেকে শোক ও শ্রদ্ধা জানান। পরে বিকেলে রাজারবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে মরদেহ আনা হয়। সেখানে সন্ধ্যা ছয়টায় সমীর কুশারীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর কালীমাতা মন্দির মহাশ্মশানে মুখাগ্নি সম্পন্ন হয়।
রেডিও ব্যক্তিত্ব রনেন কুশারীর ছেলে সমীর কুশারী ১৯৫১ সালে ঢাকার আরমানিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে সমীর কুশারীর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার ছেলে ও মেয়ে কানাডায় থাকেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন সমীর কুশারী। ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ৩২ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালে ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি (ডিওপি) হিসেবে অবসরের নেওয়ার পর একই পদে দেশ টিভিতে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দেশ টিভিতে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভিডিওগ্রাফি ও সিনেমাটোগ্রাফি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের প্রিয় ছিলেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বর্ণযুগে তিনিই প্রথম ৪৫ মিনিট দীর্ঘ একটি নাটক এক ক্যামেরায় ও এক শটে ধারণ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে বেলজিয়াম সরকারের বৃত্তি নিয়ে কালার ফটোগ্রাফি ও লাইটিং বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৮৫ সালে ইউএনডিপির হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে এশিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিটে যোগ দেন।
২০০১ সালে রমনা বটমূলে নৃশংস বোমা হামলার যে দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি হয়েছিল তা ধারণ করেছিলেন সমীর কুশারী। বিস্ফোরণের সময়ও তার ক্যামেরা থামেনি।
‘সংশপ্তক’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘পাথর সময়’, ‘সাত সমুদ্দুর’, ‘আমার দেশের লাগি’, ‘বাঁচা’সহ বহু কালজয়ী নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমীর কুশারীর নাম। তিনি এসব নাটকে চিত্রগ্রাহক বা আলোক নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন।
এইচকে/আরআইজে