এটিএম শামসুজ্জামানের প্রশংসায় কলকাতার শুভাশিস মুখার্জি
বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সফল ও বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। খল, কমেডি, ইতিবাচক সব চরিত্রেই তিনি সমান দাপট দেখিয়েছিলেন। ৫ দশকের বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি পরিচালনা এবং লেখালেখিতেও ছড়িয়েছিলেন দ্যুতি। নন্দিত এই ব্যক্তিত্বের জন্মদিন আজ।
১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এটিএম। তার পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। তিনি সিনেমা এবং নাটক দুই ভুবনেই সমানতালে অভিনয় করে গেছেন।
তবে তারকা জীবনের বাইরে এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন একজন মাটির মানুষ। সবাইকে ভালোবাসতেন, আপন করে নিতেন। কেবল দেশের শিল্পীরাই নয়, তার উদারতার নজির দেখেছিলেন কলকাতার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা শুভাশিস মুখার্জিও।
একদা সিনেমার শুটিং করতে ঢাকায় এসেছিলেন শুভাশিস। ওই সময় এটিএমের সঙ্গে দেখা হয় তার। তিনি শুভাশিসের কাছে জানতে চান, ঢাকার কোথাও যেতে চান কিনা। তাহলে তিনি নিয়ে যাবেন।
শুভাশিসের ভাষ্য, ‘আমি উনাকে বললাম- আড়ংয়ের শোরুমে যেতে চাই। শুনেছি সেখানে খুব সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবী পাওয়া যায়। ওইখানে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন গাড়িতে করে। উনি দোকানে ঢুকেছেন, সবাই উনাকে খাতির করছে। তো একটা পাঞ্জাবী দেখে আমি একটু দাঁড়িয়ে গেছি। পাঞ্জাবির কাপড়টা দেখছি হাত বুলিয়ে। উনি তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও গেলাম। যাওয়ার পর কাউন্টারের লোককে কিছু একটা দিতে বললেন। তারা একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলেন। উনি সেটা নিয়ে আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটা তোমার। পাঞ্জাবীটা তোমার পছন্দ হইছিল না? তাই এটা আমার কলকাতার মেহমানের জন্য’।
২০১৯ সালে ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। ওই সময় পুনরায় ঢাকায় এসেছিলেন শুভাশিস মুখার্জি। সে দিন মঞ্চে সবার সামনেই এই ঘটনাটি শেয়ার করেন তিনি। এটিএম শামসুজ্জামান তাকে যে পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছিলেন, সেটা পরেই তিনি সেদিন পুরস্কারের আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এটিএম শামসুজ্জামানের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৬৫ সালের দিকে। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘নয়া জিন্দেগানি’ মুক্তি পায়নি। ১৯৬৮ সালে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘এতটুকু আশা’ মুক্তি পায়। এরপর অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে অভিনয় করে দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বর্ণাঢ্য সিনে জীবনে এটিএম শামসুজ্জামান ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একবার আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৫ সালে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগার পর চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এটিএম শামসুজ্জামান।
কেআই