সুইপারম্যান: শুটিংয়ের অভাবনীয় কষ্টের গল্প শোনালেন ফারহান
ছিলেন রেডিও জকি, হলেন অভিনেতা। পরিবর্তনটা যতটা সুন্দর, ততটাই কঠিন। তবে সেই কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে দারুণ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। গত ঈদের অন্যতম প্রশংসিত নাটক ‘সুইপারম্যান’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তরুণ এই অভিনেতা। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে আপাদমস্তক সুইপার বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। যা দর্শক এবং সমালোচক সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
‘সুইপারম্যান’ নির্মাণ করেছেন মাবরুর রশীদ বান্নাহ। এতে ফারহানের সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন পারসা ইভানা, ফজলুর রহমান বাবু, শিশুশিল্পী আরিত্রা প্রমুখ। নাটকটির জন্য ফারহান অভাবনীয় শ্রম দিয়েছেন। সেই বিহাইন্ড দ্য সিনের গল্পটা তিনি শেয়ার করলেন ঢাকা পোস্ট-এর সঙ্গে।
প্রসঙ্গের শুরুতেই এলো ম্যানহলের দৃশ্যটি। কী ভেবে এমন একটি দৃশ্যে অভিনয় করলেন? প্রশ্ন শুনে ফারহান ফিরে গেলেন শুটিংয়ের সময়ে। স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘ম্যানহলের দৃশ্যটা কিন্তু দরকার ছিল না। এটাকে অন্যভাবেও দেখানো যেত। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, দৃশ্যটা যদি না দেখানো হয়, তাহলে দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কারণ আমার লাইফস্টাইল, আমার অবয়ব দর্শকরা ভালো করেই জানেন। তো হঠাৎ করে আমি স্ক্রিনে একটা সংলাপ বলে দিলেই কিন্তু সেটা বাস্তবসম্মত হবে না। যেহেতু এটা আমার রেগুলার ক্যারেক্টারের বাইরে। সেজন্য আমার মনে হয়েছে, দর্শকদের হৃদয়কে স্পর্শ করার জন্য দৃশ্যটা দেখানো জরুরি।’
নাটকটির একটি দৃশ্যে দেখা যায়, স্কুলে অন্য শিশুদের বাবা-মাও আসেন। তারা জোরালো আবেদন জানান, পরীকে (নাটকে ফারহানের কন্যা) স্কুলে রাখা যাবে না। ওই দৃশ্যে কেবল ফারহান নন, অন্য অভিভাবক চরিত্রে যারা ছিলেন, তারাও উতরে গেছেন দারুণভাবে। বিষয়টি নিয়ে ফারহান বলেন, ‘এটার সম্পূর্ণ অবদান বান্নাহ ভাইয়ের। তিনি এতোগুলো চরিত্র একসঙ্গে সামলেছেন, চরিত্রে ঢোকার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে প্রত্যেকটা শিল্পী একেবারে গল্পের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। এটা সত্যিই ভালো লাগে, যখন দেখি সহশিল্পীরা সবাই চরিত্রের ভেতরে ঢুকে গেছেন। তখন নিজের ভেতর থেকেও একটা ভালো আউটপুট বেরিয়ে আসে।’
ম্যানহলে নামার বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি হলেও ফারহান জানালেন, পুরো নাটকটির জন্যই তাকে ভীষণ পরিশ্রম করতে হয়েছিল। আরেকটি দৃশ্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আরিত্রা কিন্তু এখন অনেকটাই বড় হয়েছে। ওর স্বাস্থ্যও বেশ ভালো। তো যেই দৃশ্যে আমি ওকে কাঁধে নিয়ে হেঁটেছিলাম, সেটা কিন্তু অনেক কঠিন ছিল। ওই শট দেয়ার পর আমি কয়েক ঘণ্টা হাত নাড়াতে পারিনি। কারণ দৃশ্যটার জন্য আমাকে চারবার শট দিতে হয়েছিল!’
এখানেই শেষ নয়, গল্পের প্রয়োজনে এ নাটকের অধিকাংশ শুটিং হয়েছে উত্তরার একটি বস্তিতে। ফারহান বললেন, ‘পুরো জায়গাটি যথেষ্ঠ অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত ছিল। যেখানে বসে আমরা মেকআপ নিয়েছি, সেখানে একটি গরুর বাছুর বাঁধা ছিল। আবার আশেপাশে আরও অনেকগুলো গরু ছিল। দেখা গেল, কিছুক্ষণ পর বাছুরটি মলত্যাগ করছে, অন্য গরুগুলো ডাকাডাকি করছে। এছাড়া আমরা যেই বিছানায় বসে বা শুয়ে শট দিয়েছি, সেখানেও দুর্গন্ধ ছিল। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই আমরা শুটিং করেছি। ম্যানহলে নামার জন্য আমার ঘণ্টা দুয়েকের কষ্ট হয়েছিল। তবে পুরো নাটকটির জন্য গোটা দুই দিন কষ্ট করতে হয়েছে।’
কেআই/আরআইজে