ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে যা বললেন পরীমণি
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি নিজেই এমন অভিযোগ করেন। রোববার রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য দেন।
পরীমণি বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে নই। কিন্তু কোনো কারণে আমি যদি মারা যাই, ধরে নেবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
সাধারণের মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরে কারও সাহায্য পাইনি
‘চার দিন ধরে একদম সাধারণ মেয়ের মতো মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। পরীমণি হিসেবে যখন স্ট্যাটাসটা দিলাম তখনই সবাই (সাংবাদিকরা) আসলেন’— এভাবেই নিজের ক্ষোভ ও আক্ষেপের কথা জানালেন সদা হাস্যোজ্জ্বল পরীমণি।
বনানীর নিজ বাসায় রোববার রাত সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এ নায়িকা। তিনি বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।’
পরীমণি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?
কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাই, আপনি নির্ভয়ে বলুন— উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন।’
পরীমণি আরও বলেন, ‘সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’
তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন।
‘নাসির উদ্দিনসহ উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।’
নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি।
‘ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে যাই’ উল্লেখ করে পরীমনি বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অভিযোগ রেকর্ড করেননি। বরং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।’ এ সময় পুলিশের সাহায্যে হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বলে উল্লেখ করেন পরীমণি।
হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে : ফেসবুক স্ট্যাটাসে পরীমণি
এর আগে রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তাকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এ দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’
পরীমণি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’
কাজ করছে পুলিশ
পরীমণির ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পরীমণির ফেসবুক স্ট্যাটাস পুলিশ সদর দফতরের নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীমণির অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তিনি পুলিশের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সেবা পাবেন। উপযুক্ত বিচার পাবেন।’
অভিযোগের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে পরীমণি বলেন, ‘যা বলেছি সত্য বলেছি। আমি এর বিচার চাই। ১০ জুন থেকে আমি ট্রমার মধ্যে আছি। ভুলে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করছি, পারছি না। চেষ্টা করেছি বিচার পাওয়ার জন্য। কিন্তু সবখানে নীরবতা। বিচারের আশ্বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে এ পোস্ট দিয়েছি।’
এমএআর/ওএফ