‘ঢাকায় দুইজন সিনেমা দেখতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়’

এবারের ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ৬টি সিনেমা। এর মধ্যে ৪টি দারুণ ব্যবসা করেছে। মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে হাজির হয়ে সিনেমা দেখে দর্শকরাও বেশ প্রশংসা করেছেন। ফলে ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেও প্রেক্ষাগৃহে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ছে।
তবে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা দীপংকর দীপন মনে করেন, দেশজুড়ে আরও কিছু সিঙ্গেল স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা গেলে, টিকিটের দাম কম হলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের চাপ আরও বেশি থাকতো, বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও লাভবান হতো।
মঙ্গলবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দীপন বিষয়টি লিখেছেন এভাবে, ঢাকায় দু’জন সিনেমা দেখতে যেতে প্রায় ২০০০ টাকা খরচ হয়। ১০০০ টাকা টিকেট + ৫০০ টাকা খাওয়া + ৫০০ টাকা যাতায়াত। এটা একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক টাকা ভাই। যারা হিসাব করে চলে, একটা ভালো খাবার খেলে হিসেব করে খান- তাদের কাছে এই ২০০০ টাকা কম না।
‘এবারে ঈদের চারটা সিনেমা দেখতে প্রায় ৮০০০ টাকা খরচ। ধরুন যদি এমন হতো, সিনেমাগুলো ধারে কাছেই, ১০০ টাকার মধ্যে যাওয়া আসার রিক্সা ভাড়া হয়ে যায়, দুইটা পপকর্ন বা চিপস আর ড্রিংকস ১০০ টাকা আর সিনেমা টিকেট ২০০ করে ৪০০ টাকা। মানে ৬০০ টাকায় যদি দুজনের সিনেমা দেখা হয়ে যেত। ২৪০০ টাকা স্বামী স্ত্রী চারটা সিনেমাই দেখতে পেত। তাহলে এবারের ঈদের সিনেমা কত মানুষ দেখতো ধারণা করতে পারেন। সংখ্যাটা অনেক অনেক।’
দীপন মনে করেন, একটা বড় অংশ মাল্টিপ্লেক্সে যেতে পারেন না। তারা সিঙ্গেল স্ক্রিনেও যেতে পারেনা পরিবেশের কারণে। তাদের যদি আমরা সিনেমা হলে আনতে পারতাম। তাহলে এবারের ঈদের সিনেমাগুলো মোট কত টাকা ব্যবসা করতো, একবার ধারণা করুন। বাংলাদেশে ২০-৩০ কোটি টাকা গ্রস করা কোন বিষয়না। স্ট্যান্ডার্ড রেশিওতে প্রডিউসারের ঘরে ১০-১২ কোটি টাকা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়।
আরও পড়ুন
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির কথা উল্লেখ করে এই নির্মাতা লিখেছেন, ভাবছেন টিকেট- পপকর্ণের দাম এমন হলে সিনেমা হল লাভ করতে পারবে না। পারবে, বরং বেশি পারবে। পুরো সাউথ ইন্ডিয়ার সিনেমা হল গুলোতে এমনই খরচ। সে কারণে ওখানে প্রচুর মানুষ সিনেমা দেখে, লাভটা বেশি আসে। বাংলাদেশে সিনেমার স্বর্ণ সময়েও মুদ্রাস্ফীতি বিচার করে এমন খরচই ছিল। মাল্টিপ্লেক্স খুব জরুরী, মাল্টিপ্লেক্স থাকুক, আরো বাড়ুক। পাশাপাশি একটা কম টাকায় এসিতে সিনেমা দেখার ব্যবস্থাও থাকুক। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প তাহলে অনেক শক্ত জায়গায় পৌঁছে যাবে।
দীপনের কথায়, আর সিঙ্গেল স্ক্রিণগুলো একটা ছবি চালাতে হবে এই নিয়ম ভাঙ্গার সময় এসেছে। সাউথ ইন্ডিয়ার সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো একটা দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিনেমা চালায়। ভিন্ন ভিন্ন সিনেমা ভিন্ন দর্শক-সব ধরণের সিনেমার সব ধরণের সিনেমা দেখার সুযোগ পান। সিনেমাগুলো অনেক দিন ধরে চলে। বেশি চলা সিনেমা দিনে দুটো শো পায় আর বাকী গুলো দিনে একটা করে। টিকেট সিস্টেম অনলাইন হলেই এটা সহজেই করা যায়। একসময় এটাই হবে। যত দেরীতে আমরা করবো ততই আমাদের ক্ষতি।
সবশেষ এই নির্মাতার অনুরোধ, বরবাদ সিনেমার প্রযোজককে অনুরোধ করবো আপনি এই রকম সিনেমা হলে বানান যেন মানুষ একটু কম টাকায় সিনেমা দেখতে পারে। এই জিনিস আরো অনেকেই করতে পারতো- এই ক্ষমতা অনেকের আছে। আপনাকে অনুরোধ করলাম- কারণ আমার মনে হয়ে বাংলাদেশের সিনেমার প্রতি আপনার একটা মায়া ও এটা করার সক্ষমতা আছে।
এনএইচ