বিমান ছিনতাইয়ে গিয়ে নিহত স্বামী, বহু বছর পর মুখ খুললেন সিমলা
ভালোবেসে প্রেমিক-প্রেমিকার অবাক করার মতো বহু ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হলেও প্রেমিকাকে পেতে প্রেমিকের বিমান ছিনতাইচেষ্টা এবং অকালে জীবনের মায়াত্যাগ, এমন ঘটনা এই দেশে আগে কখনো ঘটেনি। যেমনটা ঘটেছিল ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খী’তে।
এদিন ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৭ উড্ডয়নের পর ‘ম্যাডাম ফুলি’-খ্যাত নায়িকা সিমলার স্বামী পলাশ আহমেদ বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ‘ছিনতাইয়ের’ চেষ্টা করেন। উড়োজাহাজ ছিনতাই করতে গিয়ে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ।
এরপর পুলিশের তদন্তে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিমলার সঙ্গে পলাশের বিয়ে হয়। পলাশ আগের বিয়ের খবর গোপন করায় ওই বছরের ৬ নভেম্বর সিমলা তাকে ডিভোর্স দেন। ডিভোর্সের পরেই ‘হতাশা’ থেকে বিমান ‘ছিনতাইয়ের’ চেষ্টা করেন পলাশ।
এ ঘটনায় অভিনেত্রী সিমলাকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যেখানে অভিনেত্রী জানান, বিয়ের পর মনে হয়েছিল পলাশের মানসিক সমস্যা আছে। তাই ডিভোর্স দিই। তবে কেন বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গেছেন, সেটা বলতে পারছি না।
বিমান ছিনতাইয়ের সেই ঘটনা টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছিল সে সময়ে। উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাইচেষ্টা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তদন্ত শেষে আদালতে জমা দেয় পুলিশ।
তদন্তে মোট ৭৯ জনের সাক্ষ্য ও বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার পর জানা গেছে, সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা শামসুন নাহার সিমলা ডিভোর্স দেয়ার পরই হতাশা থেকে বিমান ‘ছিনতাইয়ের’ নাটক করেন পলাশ।
এরপর সময় গড়িয়েছে, সিমলাও তার ব্যক্তিগত জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনা নিয়ে আবারও কথা বলতে দেখা গেল ‘ম্যাডাম ফুলি’ খ্যাত এই অভিনেত্রীকে।
যেখানে সেই ঘটনা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপই শোনা যায় সিমলার কণ্ঠে। অভিনেত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে ভালোবাসার জন্য এই ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না বলতে পারি না, তবে আমি বিষয়টি নিয়ে গর্ব করছি না। কারণ এটা আমার জন্য কষ্টের।’
আরও পড়ুন
সিমলা বলেন, ‘আমি চাই না কখনো আমার জন্য কেউ এসব করুক। বেঁচে থাকতে আর কখনো এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে চাই না। আমাকে ভালোবাসলে একটা ফুলই যথেষ্ট।’
বয়স চল্লিশের গণ্ডি পেরুলেও এখনও সিনেমায় ফিরতে চান সিমলা। জানালেন, যেকোনো চরিত্র পেলেই অভিনয় করবেন। সেটা নায়িকা হোক কিংবা পার্শ্বচরিত্র, আপত্তি নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৭ উড্ডয়নের পর পলাশ আহমেদ বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ‘ছিনতাইয়ের’ চেষ্টা করেন।
বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানের ‘ইমার্জেন্সি ডোর’ দিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের দ্রুত বের করে আনা হয়। ওই সময় পলাশ সিমলার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে তখন কমান্ডো অভিযানে থাকা বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
পরে আট মিনিটের এক কমান্ডো অভিযানে পলাশ আহমেদ নিহত হন। ওই সময় বিমান থেকে একটি খেলনা পিস্তল ও কিছু বিস্ফোরকসদৃশ বস্তু আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।
এনএইচ