সঞ্জীব চৌধুরী: সাংবাদিক থেকে অনন্য সংগীতশিল্পী
‘আমি তোমাকেই বলে দেব, কী যে একা দীর্ঘ রাত, আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে’-এই গান গাইতে গাইতে বিরান পথে হেঁটে অগণিত শ্রোতার হৃদয় দখল করেছিলেন যিনি, তার নাম সঞ্জীব চৌধুরী। বাজার কাটতি গানের ভিড়ে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন কিছু ব্যতিক্রম গান। যেগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছিল নাগরিক জীবনের গভীর অনুভব।
তিনি পড়াশোনা করেছিলেন সাংবাদিকতা বিষয়ে। কর্মজীবনেও ছিলেন সাংবাদিক। দেশের নামকরা গণমাধ্যমে লিখতেন। কিন্তু এই গণ্ডি ছাপিয়ে তিনি অনন্য হয়ে উঠেছিলেন সংগীতশিল্পী হিসেবে। গানের সঙ্গে যদিও তার সখ্য ছাত্রজীবন থেকেই।
‘শঙ্খচিল’ নামে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পথচলার শুরু। এরপর ১৯৯৬ সালে বাপ্পা মজুমদার ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে গঠন করেন ‘দলছুট’ ব্যান্ড। ব্যাস, তারপর থেকে সঞ্জীবের গান হয়ে ওঠে রুচিশীল তরুণদের মনের খোরাক। প্রেম-বিরহ কিংবা জীবনবোধ সবই উঠে এসেছে তার গানে।
২০০৭ সালে বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন সঞ্জীব চৌধুরী। সে বছরের ১৫ নভেম্বর আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। কিন্তু চারদিন পর ১৯ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।
তিনি বেঁচে থাকাকালীন ‘দলছুট’ ব্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আহ্’ (১৯৯৭), ‘হৃদয়পুর’ (২০০০), ‘আকাশচুরি’ (২০০২) ও ‘জোছনা বিহার’ (২০০৭) অ্যালবামগুলো।
সঞ্জীব চৌধুরীর কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘গাড়ি চলে না’, ‘বায়োস্কোপ’, ‘আমি তোমাকেই বলে দেবো’, ‘কোন মিস্তিরি বানাইয়াছে নাও’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’, ‘সাদা ময়লা রঙিলা পালে’, ‘কথা বলবো না’, ‘এই নষ্ট শহরে’, ‘রিকশা’, ‘চোখটা এতো পোড়ায় কেন’ ইত্যাদি।
শুধু সাংবাদিকতা আর গান নয়, লেখক হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। তার লেখা কবিতা নিয়ে প্রকাশ হয়েছে ‘রাশপ্রিন্ট’ নামের একটি কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া ছোট গল্প, নাটকও লিখতেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব।
২৫ ডিসেম্বর সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার রেখে যাওয়া গান এখনো সবার হৃদয়ে বেজে যায়।
এমআইকে