দর্শকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করি
‘ফেসবুকে কটূক্তি’র জের ধরে বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের শো চলার মাঝপথেই সেটি থামিয়ে দিতে বাধ্য হন মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে নাটকটি চলা অবস্থায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাটকটি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান খোদ জামিল আহমেদ নিজেই।
কী কারণে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করতে হয়েছিল, রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়েছেন তিনি।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গার শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব আমার মাথায় ছিল। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমরি ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদের আক্রমণ করে বসে সে শঙ্কা ছিল। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
ঘটনা প্রসঙ্গে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি সেখানে যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।’
জামিল আহমেদ আরও বলেন, ‘গত এক মাসে এখানে এমন অনেক নাটকের দল নাটক করেছে, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমি এবং আমার সহকর্মীরা বলেছি, তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কি না।’
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, ‘তারা কিন্তু নাটক করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। দেশ নাটকের “নিত্যপুরাণ” নাটক নিয়েও আপত্তি ছিল না। উত্তেজিত জনতার আপত্তি কেবল একজন ব্যক্তিকে নিয়ে। পরে তারা দেশ নাটকের প্রদর্শনীও বন্ধের দাবি তোলেন।’
জানা যায়, নাটকের শো শুরুর আগে শিল্পকলার গেটে বিক্ষোভকারীরা নাটক বন্ধের জন্য ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এরপর তারা ‘দেশ নাটক’র দলনেতা এহসানুল এজাজ বাবুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান এবং নাটকটি বন্ধ করে দিতে বলেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, এহসানুল এজাজ ফেসবুকে বর্তমান সরকার নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। একপর্যায়ে শিল্পকলার প্রধান সৈয়দ জামিল সেখানে গিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিক্ষোভকারীদের কোনোভাবে শান্ত করতে না পেরে তিনি মঞ্চে চলতে থাকা নাটকটির মাঝখানে ওঠেই সেটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন।
মঞ্চে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘এতোক্ষণ (ঠেকানোর) যুদ্ধ করলাম তো, এখন যেটা হবে- এখানে এসে উত্তেজিত জনতা আগুন দিয়ে দেবে। সেটি আরো ভয়ঙ্কর হবে।’
ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে সেখানে থাকা নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ‘আসলে পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল এবং জামিল ভাই এসে বললেন বন্ধ করতে হবে, কারণ তিনি ওদের বোঝাতে পারছিলেন না। তখন নাটকটা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমরা আর কিছু ভাবতে পারিনি।’
এনএইচ