জনগণের কাছে দেশটা কারাগার : আফজাল হোসেন
রাজনীতির বাঁকবদল কিংবা সরকার পরিবর্তনেও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। দিনের পর দিন জনগণ কয়েদ খেটে যান— এমনটাই মনে করেন দেশের প্রবীণ অভিনেতা আফজাল হোসেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের ভাবনা শেয়ার করেছেন তিনি। যেখানে আফজাল হোসেন লিখেছেন, বিনা দোষে কয়েদ খেটে চলেছে জনগণ। সেই কবে থেকে। একাত্তরে রক্ত অশ্রুর বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন হলো। দেশবাসী খুশিতে কেঁদে ফেললো, পেয়েছি প্রাণের দেশ। দিন যায় খুশির কাঁন্দন আপনা আপনিই শুকিয়ে যায় আপন আপন গালে। নিজের দেশ হয়েছে ভেবেছিল যারা, তারা পদে পদে হোঁচট খেয়ে বুঝতে পারে, দেশটা নিজের বলে ভেবেছিল কিন্তু নিজের হয়নি। অনেক বছর ধরে জনগণ বা দেশবাসী দেখেছে, বুঝেছে। দেশবাসী চাইলেই দেশ নিজের হয়ে যায় না।
এরপর এই অভিনেতা লেখেন, দেশবাসী বারবার দেখেছে, দেশ তাদের এটা শুধু মুখের কথা, কেবলই মুখে মুখে মালিকানা। সান্ত্বনা, না পুরস্কারের মতো। দেশকে পুরস্কার হিসেবে অন্যরা নিয়ে নেয়। অন্যরা মানে দলের নামে বিভিন্ন গোষ্ঠী। দেশ দলের হয়ে যায়। হয়ে যায়, যে যখন সিংহাসনের দখল পায় তাদের আর দলীয় কর্মীদের। কেউই কখনো দেশকে দেশের প্রকৃত মালিক জনগণের হতে দেয়নি। একদল চোখ কান বুজে জীবনেও নামবে না ভেবে সিংহাসনে গ্যাট হয়ে বসে থেকেছে অন্যরা ক্রমাগত ঠ্যালা গুঁতো মেরেই চলেছে নামরে তোরা, আর কতদিন!
আফজাল হোসেনের ভাষায়, একেকটা দল বা গোষ্ঠী দেশটাকে নিজের করে পেতে জনগণ, দেশবাসীর দোহাই দিয়ে গেছে চিরকাল। জনগণের দেশ জনগণের হাতে আমরাই ফিরিয়ে দেব বলেছে তা কথার কথা হয়েই থেকেছে শেষ পর্যন্ত। দেশবাসী বা জনগণ একবার নয় বহুবার দেখেছে যখন সময় বদলে গেছে, একদল নেমেছে, আর একদল জনগণের জয় হয়েছে বলে চড়ে বসেছে সিংহাসনে। নতুন মালিক এসে শাসন শুরু করেছে পুরাতনদের জেলে পাঠিয়ে।
আরও পড়ুন
সিংহাসন উল্টে গেলে হাজারটা কারণে পুরাতনদের যেতে হয় জেলে- অভিনেতার কথায়, দেশবাসী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দ্যাখে একদল চোখ মুছতে মুছতে জেলে গেল। তারপর ফিরল একদিন। ফেরে হাসতে হাসতে বীরের বেশে। ততদিনে ক্ষমতায় থাকাদের নাট বল্টু ঢিলা হয়ে গেছে। জেলে যাওয়ারা ফিরে এসে হালুম-হুলুম করে সর তোর, জনগণের দেশ জনগণের হাতে ফেরত দিতে এসেছি। সিংহাসন উল্টে গেলে হাজারটা কারণে পুরাতনদের যেতে হয় জেলে, জেলখানায়।
জনগণের মুক্তি নেই উল্লেখ করে আফজাল হোসেন বলেন, এই সিংহাসন টু জেলখানা, জেলখানা টু সিংহাসন চলছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। দেশের এই মহাজনদের জেলখাটা বোধহয় খুব কষ্টের হয় না, কারণ জেলযাপন শেষ হলে কপালে আবার ফিরে আসবে সিংহাসন এই মুলাখানা নাকের ডগায় ঝুলতে থাকে। এ আমল যায়, সে আমল আসে আমলের মানুষ যারা, তারাই দেশের মালিকানা পায়। দেশ পাওয়ার আনন্দ ভোগ করতে পারে। কোনো দলের না হওয়া জনগণের কাছে সারা জীবন দেশটা কারাগার, জেলখানা হয়েই থাকে। আমল থেকে আমলে তাদের জেলখাটা চলে চলছেই। মুক্তি নেই তাদের। মুক্তি মেলে না। জেনেছে, সিংহাসন, দেশ কোনো দিনই তাদের হওয়ার নয়। এই যাবজ্জীবন কয়েদবাস সবচেয়ে মর্মান্তিক।
এনএইচ