হায়রে অরুণা বিশ্বাস, চেয়েছিলেন আমাকে গুলি করে দিক?
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনায় মত্ত ছিল হাসিনাপন্থী তারকারা। সরকার পতনের আগ মুহূর্তেই এসব পরিকল্পনার সুতো বাঁধা হচ্ছিল। চাটুকার খ্যাতি পাওয়া সেসব তারকাদের কাজ ছিল, কারা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে, আর কারা বিপক্ষে, তা চিহ্নিত করা। বলে রাখা ভাল, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দেশের তারকা অঙ্গন দু ভাগে বিভক্ত হয়।
দেশের যেসব তারকারা ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন, তাদের ওপরেও ছক কষা হচ্ছিল। অনেক তারকারাই সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন। যারা করেছিলেন, তাদের সেই পোস্টের স্ক্রিনশট তুলে ধরে 'চিনে রাখার' হুমকীও দেওয়া হয়।
সম্প্রতি দেশে 'আলো আসবেই' নামে একটি হোয়াটসএপ গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কথা ফাঁস হয়ে যায়। সেখান থেকেই পাওয়া যায় এসব ভয়ঙ্কর তথ্য। সঙ্গে বেশ কিছু তারকাদের কালো চেহারাও সুপষ্টভাবে ভেসে ওঠে। যেমন, ওই গ্রুপে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ‘গরম পানি ঢালার’ পরামর্শ দেন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। আর গ্রুপটির নেতৃত্বে ছিল ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও চিত্রনায়ক রিয়াজ।
আরও পড়ুন
সেই গ্রুপের একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আসা অভিনেত্রী এলিনা বিশ্বাসের একটি পোস্ট তুলে ধরেছেন অরুণা বিশ্বাস। যাতে এলিনার ভাষ্য ছিল, অর্থের বিনিময়ে বাবা-মা কে সন্তান হারানোর শোক ভোলানো যায়? তবে এতকিছু পেয়েও আজ আপনি কাঁদেন কেন?
সম্ভবত এলিনা পোস্টটি করেছিলেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে। কারণ, স্বজন হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরে বেশ কয়েকবার জাতির সামনে কান্নার ভঙ্গি করেছেন তিনি। আর সেটিই হয়ত পরোক্ষভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন এলিনা।
এলিনার সেই পোস্টটি শেয়ার করা হয় 'আলো আসবেই' নামে সেই গ্রুপে। সেটি শেয়ার করেন হাসিনার দোসর হিসেবে চিহ্নিত চিহ্নিত অরুণা বিশ্বাস। আর এলিনার সেই পোস্টটি দেখেই রাগ ও ক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা যায় সেই গ্রুপের সদস্যদের।
সেই ফাঁস হওয়া কথোপকথের ওই অংশ নজরে আসে স্বয়ং এলিনা শাম্মীর। সে প্রসঙ্গে এক ফেসবুক পোস্টে এলিনা লেখেন, ‘যদি ৫ই আগষ্ট না আসতো, যদি দেশ স্বাধীন না হত, আজ আমার অথবা আমাদের কী পরিণতি হত জানিনা। হায়রে অরুণা বিশ্বাস আপনি আমার পছন্দের শিল্পী ছিলেন, আমিও আপনার স্নেহভাজন ছিলাম। কল দিলে কত মনের কথা বলতেন আমিও সমান ভাবে মন খুলে গল্প করতাম। অথচ ছাত্র আন্দোলনের সময় দেওয়া ষ্ট্যাটাস এর স্ক্রিনশট নিয়ে আপনাদের গ্রুপের মধ্যে দিয়ে দিলেন। কি চাচ্ছিলেন? আমাকে ধরে নিয়ে আয়না ঘরে রাখুক, নাকি সরাসরি গুলি করে দিক?’
শেষে এলিনা লেখেন, ‘অন্যের জন্য কুয়া খুড়লে সেখানে নিজেকেই পড়তে হয়। এত নিষ্ঠুর কেন আপনি /আপনারা? শুধু ছাত্রদের পক্ষেই তো থাকতে চেয়েছি, তাদের গুলি করে পাখির মত মেরে ফেলছিলো আপনাদের ফ্যাসিস্ট সরকার, সেই প্রতিবাদই তো করেছি, তাই স্বৈরাচারের দোসরেরা মিলে স্ক্রিনশট জোগাড় করে জমা করছিলেন শাস্তি দেবেন বলে? শাস্তি কাদের ভাগ্যে জোটে সেটাই এখন দেখার পালা।’
এলিনা সেই পোষ্টের পর তার অনুরাগীরাও ভীতি প্রকাশ করেন। একজন লিখেছেন, কি ভয়াবহ! ভাবা যায় না।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের আগে তারকাদের একটি দল শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আওয়াজ তোলে। বিষয়টি শুধু আওয়াজ তোলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল বলেই জানত অনেকে। কিন্তু গত মঙ্গলবার এমন কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যেখানে উঠে আসে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। ভেসে ওঠে দেশের কিছু তারকাদের কালো মুখ।
সম্প্রতি ‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে থাকা সকল কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। সেই গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও চিত্রনায়ক রিয়াজ। আরও ছিলেন অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি, তানভীন সুইটি, সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাস, অভিনেতা সাজু খাদেমসহ আরও অনেকেই।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অন্যান্য তারকাদের মাঝে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সামাজিক মাধ্যমে অনেক তারকারা সেই অভিযুক্তদের নিয়ে নিন্দাও প্রকাশ করেন, ধিক্কার জানান।
ডিএ