লাল রঙে ছেয়ে গেছে তারকা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফেসবুক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় এই শোক পালনকে প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা একক ও দলবদ্ধভাবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা প্রচার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাদের সেই আহ্বানের পর ফেসবুক রীতিমতো লাল রঙে ছেয়ে গেছে। দেশের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, তারকারা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে ‘লাল রঙ’ বেছে নিয়েছেন।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে লাল রঙের মাঝে মানচিত্রের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। যেই একই ছবি প্রকাশ করতে দেখা গেছে স্বনামধন্য গীতিকার প্রিন্স মাহমুদকেও।
মহানগর খ্যাত নির্মাতা আশফাক নিপুণ তার ফেসবুক প্রোফাইলে পরিবর্তন এনেছেন। ‘ন্যায়বিচার বিলম্বিত, ন্যায়বিচার অস্বীকার করা’ ক্যাপশনে লাল রঙের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন
দেশের আরেক জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে লাল রঙের ব্যানারে ‘ফুলগুলো সব লাল হলো ক্যান?’ ক্যাপশনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন।
অভিনেত্রী অপি করিম তার ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন- শুধু কোটা নয়, গোটা দেশটার সংস্কার প্রয়োজন। অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলাও তার প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে লাল ছবি দিয়েছেন। এছাড়াও ছোট পর্দার বর্তমান সময়ের অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান, তার ফেসবুক প্রোফাইলে পিকচার পরিবর্তন করে লাল রঙ বেছে নিয়েছেন।
অনলাইন শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান ‘১০ মিনিট স্কুল’-এর প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক এবং একই প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি শিক্ষিকা মুনজেরিন শহীদ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল রঙে পরিবর্তন এনেছেন। বাদ যায়নি ‘রাফসান দ্যা ছোটভাই’সহ অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও।
এছাড়াও নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, আকরাম খান, প্রযোজক সারা আফরীন, খিজির হায়াত খান, রেদওয়ান রনি, মোহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম, চিত্রনায়ক নিরব, নায়িকা বিপাশা কবীর, সোহেল রানা, শাহনাজ সুমি, সুনেরাহসহ আরও অনেক তারকারা তাদের ফেসবুক লাল রঙে ছেয়ে ফেলেছেন।
দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া অনেকে আবার মুখে ও চোখে লাল কাপড় বাঁধা ছবিও নিজের প্রোফাইল পিকচার দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তখনো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো মধ্যরাতে বাসাবাড়িতে ব্লক রেইডের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
সমন্বয়করা বলেন, বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে প্রতিদিনই নির্মমভাবে শিক্ষার্থীদের দমন-নিপীড়ন ও মানুষের জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় প্রচার করছে এবং মিডিয়ার সামনে দেওয়া সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মায়াকান্না প্রচার করছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল (মঙ্গলবার) লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি করার জন্য অনুরোধ করছি।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আপনারা মঙ্গলবারের কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করুন। আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, ছাত্রসমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন।
এনএইচ