বুয়েটে ভর্তি হয়েও শান্তিনিকেতনে চলে যান সাদি মহম্মদ
মানসিক অবসাদে ভুগে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নিলেন কিংবদন্তি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় নিজ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তার ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ ও শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু শামীম আরা নীপা। এ বিষয়ে নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিলো। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করছি।’
সাদি মহম্মদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। মায়ের নাম জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদি মহম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন ১৯৭৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে যান। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে শুরু পথচলা।
বর্ষা ও বসন্তের গান পছন্দ করতেন সাদি মহম্মদ। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা দেখার কথাও বলেছেন। উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের সিনেমা ছাড়াও হলিউডের ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’, ‘রোমান হলিডে’ ছিল তার বেশ পছন্দের। এ ছাড়া বই পড়তেন। প্রিয় লেখকদের একজন ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মধ্যদিয়ে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়া ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।
একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।
গত বছরের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এরপর থেকেই নাকি নানা কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই সংগীত তারকা।
এনএইচ