জন্মদিন এলে মনে হয়, জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে ফেলছি : ববিতা
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ফরিদা আক্তার পপি। যাকে সবাই ববিতা নামেই চেনেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও পেয়েছেন পরিচিত-স্বীকৃতি। অভিনয় ক্ষুধা এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
আজ রোববার (৩০ জুলাই) ৭১ বছর বয়সে পা রেখেছেন ববিতা। ১৯৫৩ সালের এই দিনে বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। যদিও তাদের পৈতৃক নিবাস যশোরে। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউর একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা জাহান আরা বেগম ছিলেন একজন চিকিৎসক। বাবার চাকরির সুবাদে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন।
গত কয়েক বছর ধরে একমাত্র ছেলে অনিকের সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করতে কানাডায় চলে যান বরেণ্য এ অভিনেত্রী। এবারও আছেন সেখানে, গত মে মাসের মাঝামাঝিতে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। মা-ছেলে মিলে কানাডার কিচেনার শহরে থাকেন। দিনটিতে মাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার নানা চেষ্টা করেন। এবারও তেমন কিছু করবে বলেই জানালেন ববিতা।
জন্মদিনে নিজের উপলব্ধি নিয়ে ববিতা বলেন, ‘আমার জন্য সৃষ্টিকর্তা যে বয়সটা নির্ধারণ করেছেন, তা থেকে একটি বছর কমে গেল, এটা মনে হয়। বাস্তবে তো জন্মদিন এলেই জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে ফেলছি, এরপরও আমরা উদযাপন করি। তবে ধুমধাম করে জন্মদিন কখনোই উদ্যাপন করিনি। আমি মনে করি, এত হইচই করার কিছু নেই। মনে হয়, জীবন একটাই, এখনো অনেক কিছু করার আছে। কী করতে পারলাম না—এসব নিয়ে ভাবি।’
অভিনয় দিয়ে মানুষের মন জয় করা ববিতাকে এখন আর অভিনয়ে দেখা যায় না। তবে তিনি অভিনয় করতে চান। তার কথায়, ‘আমি তো আমৃত্যু অভিনয়ে থাকতে চাই। আসলে সেই ধরনের গল্প পাই না। মুগ্ধ করার মতো গল্পের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসেননি। একটা কথা কী, কোনো শিল্পীই এক জীবনে সবকিছু পেয়ে গেছেন, এটা হয় না। সব শিল্পীরই মনের মধ্যে আমৃত্যু অতৃপ্তি থাকবে। আমারও আছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই না। তবে কোনো পরিচালক নতুন কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কাছে আসেননি।’
১৯৬৮ সালে ‘সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে ববিতার। এতে রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন, যদিও মুক্তি পায়নি সিনেমাটি। চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। কিন্তু জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম হয়ে যায় ‘ববিতা’।
নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম সিনেমা ‘শেষ পর্যন্ত’। এটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট। এরপর থেকে অভিনয়ে নায়িকা হিসেবে অর্জন করেন তুমুল জনপ্রিয়তা। বাণিজ্যিক সিনেমার অন্যতম সফল নায়িকা হিসেবে গণ্য করা হয় ববিতাকে।
ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ববিতা। এরমধ্যে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আলোর মিছিল’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘বসুন্ধরা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমণি’, ‘লাঠিয়াল’, ‘মা’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দহন’, ‘দিপু নাম্বার টু’, ‘অশনি সংকেত’, ‘রামের সুমতি’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘মিস লংকা’, জীবন সংসার’, ‘লাইলি মজনু’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘পোকামাকড়ের ঘরসংসার’ সিনেমাগুলো উল্লেখযোগ্য।
১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন তিনি। ১৯৮৫ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ২০০২ ও ২০১১ সালে পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৬ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া দেশ-বিদেশের আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে এই কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পীর ঝুলিতে।
কেএইচটি