সেই মরিয়ম ও নূরের পাশে পরীমণি
পরিবারে মা নেই, অবুঝ দুই শিশুকে দেখারও কেউ নেই। বাবা রিকশাচালক রনি সিকদার ফিরোজ প্রতিদিন তার দুই শিশু সন্তান মরিয়ম ও নূরকে ঘরে তালাবন্দি করে রেখে যান। প্রস্রাব-পায়খানা করে নোংরার মাঝেই বসে থাকতে হয় তাদের। পিপাসা লাগলে জানালা দিয়ে বাইরে কাউকে ডেকে বলে, পানি খাব।
অবশ্য এখন আর তালাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে না তাদের। ইতোমধ্যে রনি সিকদার ফিরোজকে আর্থিক সহায়তা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর বরাদ্দের। সহৃদয়বান এক ব্যক্তি উপহার দিয়েছেন চার্জার রিকশা। দুই শিশু মরিয়ম ও নূরকে দেখভাল করছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত দিবাযত্ন কেন্দ্র।
এবার অসহায় শিশু মরিয়ম ও নূরকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এলেন হালের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণি। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে স্থানীয় কনটেন্ট নির্মাতা সাব্বির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে নিজের আগ্রহের কথা জানান অভিনেত্রী।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সাব্বির খান ও চিত্রনায়িকা পরীমণির ব্যক্তিগত সহকারী দিপু। তবে কীভাবে সাহায্য করবেন তা রিকশাচালক রনি সিকদার ফিরোজের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তারা।
সাব্বির খান বলেন, ‘রনি সিকদার ফিরোজের বাসা আর আমার বাসা খুব বেশি দূরত্বে নয়। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর সচরাচর আমার মোবাইলে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। গতকাল এক ব্যক্তি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এসে একটি রিকশা উপহার দিয়ে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চিত্রনায়িকা পরীমণি রিকশাচালক ফিরোজকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত তার দুই সন্তান মরিয়ম ও নূরকে তার ছেলে রাজ্যর সঙ্গে লালন-পালন করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন।’
সাব্বির বলেন, ‘পরীমণি ছোটবেলায় তার মাকে হারিয়েছিলেন সেই স্মৃতিচারণও করেন। তিনি বলেছেন, শিশু দুটিকে তালাবদ্ধ করে রেখে যাওয়ার প্রতিবেদনটি দেখার পরে রাতে তার ঘুম হয়নি। খুবই মর্মস্পর্শী ঘটনা। এজন্য তিনি চাইছেন অসহায় এই পরিবারটিকে সাহায্য করতে। সেজন্য প্রথমে রিকশাচালক ফিরোজের সঙ্গে কথা বলতে চান। আলাপ করে ফিরোজের যেটা সুবিধা হবে সেইভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী তিনি।’
এ বিষয়ে চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী দীপু পরীমণির সহায়তার আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ‘২ সন্তানকে ঘরে তালাবদ্ধ করে জীবিকার সন্ধানে নিরুপায় বাবা’ শিরোনামে গত ১২ জুলাই জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রচার করে। এরপরই এই পরিবারকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় প্রশাসনসহ অনেকেই।
২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেন রনি সিকদার ফিরোজের স্ত্রী মারজান। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় ৪ মাস ১৮ দিন কারাবন্দি ছিলেন ফিরোজ। পরবর্তীতে প্ররোচনায় সম্পৃক্ত না থাকায় খালাস পান তিনি বলে জানিয়েছেন ফিরোজ।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/কেএইচটি