সংগীত ঐক্যের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বললেন স্পিকার
১৬ জুলাই রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মূল মঞ্চে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দেশীয় সংগীতের প্রথম জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন। সংগীত সংশ্লিষ্টদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশীয় সংস্কৃতিকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্য সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ উৎসবটি আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। সভাপতিত্ব করেন সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।
এদিন সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। এরপর সংগীত পরিবারে প্রয়াতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগীত ঐক্যের দুই মহাসচিব সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও নকীব খান। এরপর বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কে এম খালিদ এমপি এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী। উৎসব সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর বক্তব্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজনের প্রথম পর্ব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘আমাকে যখন বলা হলো এই আয়োজনের কথা, তখন আমার কাছে মনে হলো এটা বিরল সুযোগ। এটা হাতছাড়া করতে চাইনি। কারণ সংগীতের তিনটি সংগঠন মিলে যে আয়োজন বা ঐক্য করেছে সারা দেশের শিল্পীদের নিয়ে, এটা প্রশংসনীয়।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পীরা আমৃত্যু গেয়েই গেছেন, কী পেলেন সেই হিসাব মেলাননি। এবার ভাবার সময় এসেছে শিল্পীদের যোগ্য সম্মান ও সম্মানী ফিরিয়ে দেওয়ার। সকল জটিলতা সমাধানের এখনই সময়। সংগীত ঐক্য প্রণীত ১৮ দফা প্রস্তাবনা আমি দেখেছি। এতে একটি লক্ষ্য রয়েছে। সেটার মধ্য দিয়েই কার্যকর ফল আসতে পারে। এটাই ঐক্যের অনন্য বৈশিষ্ট্য। বাংলার মাঝি থেকে কৃষক, মা থেকে শিক্ষক- সবাই গান ভালোবাসেন। এখন ভিডিও দেখি সিনেমার মতো লাগে। সময়ের সঙ্গে এগুলোকে আমরা আলিঙ্গন করছি। তাই এই সুযোগগুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ঐক্যের দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক। যার অনেকখানি পূরণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিশেষ করে কপিরাইট আইন সংশোধন, রয়্যালটির ন্যায্যতা ও সম্মানী বৃদ্ধি হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এগুলোর উদ্যোগ নিলে আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য শতভাগ আন্তরিক থাকবো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দারুণ এক সুখবর দেন শিল্পীদের। তিনি জানান, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে চালু হচ্ছে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট। যেটি সূচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্পীরা হৃদয়ের তাগিদে গান করেন। আমরা তাদের কিচ্ছু দিতে পারিনি। অথচ এই সংগীত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার ছিল। যুদ্ধে কী পরিমাণ প্রেরণা যুগিয়েছে গান, ভাবা যায় না। কাজেই সংগীতের যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে এই ঐক্যের মাধ্যমে, সেগুলো সব যৌক্তিক। এগুলো বাস্তবায়নের পথে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
এর আগে বিকাল ৪টায় থেকে শুরু হয় মতবিনিময় সভা। এতে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শতাধিক শিল্পী-সংগঠক।
রাত ৮টা থেকে শুরু হয় জমকালো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এ পর্বে গান পরিবেশন করেন শওকত আলী ইমন, মেহরীন, দিনাত জাহান মুন্নী, জয় শাহরিয়ার, কিশোর, কোনাল, জয়িতা, রন্টি, সন্ধি, সভ্যতা, শাওন গানওয়ালা, হৈমন্তী, অবন্তী, এ আই রাজু, ইউসুফ, আকাশ মাহমুদ, রাজু আহমেদ, অপু আমান প্রমুখ। ব্যান্ডের মধ্যে গান পরিবেশন করে সোলস ও ফিডব্যাক। শেষে একটি বিশেষ পরিবেশনায় অংশ নেন মানাম আহমেদ, নকীব খান, কুমার বিশ্বজিৎ ও বাপ্পা মজুমদার। পুরো আয়োজন সঞ্চালনা করেন সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গীতিকবি, সুরস্রষ্টা, মিউজিশিয়ান ও কণ্ঠশিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সংগীতের চার সংগঠন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ, মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি বাংলাদেশ, সিংগার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশন-এর সম্মিলিত মঞ্চ ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’।