ঢালিউডে অবহেলিত ভাষা আন্দোলন
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যেই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, বলা হয় তার বীজ বপন হয়েছিল ৫২‘তে। দিনটি ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত, রফিকসহ অনেক তরুণের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।
ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া একমাত্র জাতি বাঙালি। এজন্য ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ ঢালিউড এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমার সংখ্যা মাত্র ৩। এই লেখায় জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।
জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
ভাষা আন্দোলন নিয়ে ৩টি সিনেমার একটি নির্মাণ হয় মুক্তিযুদ্ধের আগে। যার নাম ‘জীবন থেকে নেয়া’। এটির পরিচালক প্রখ্যাত নির্মাতা জহির রায়হান। এক সাধারণ পরিবারকে কেন্দ্র করে সিনেমা কাহিনি গড়ে উঠে। এরমধ্য দিয়ে ১৯৫২ সালের সময়কে তুলে ধরা হয়েছে বড়বোনের চরিত্রে অভিনয় করা রওশন জামিলকে দিয়ে।
বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকে রওশন জামিল। আর পুরো পরিবারের ওপর অত্যাচার করেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করেই স্বামীসহ নিজের দুই ভাইদের ওপর স্বৈরশাসন চালান। যা তৎকালীন পাকিস্তান বাহিনীর প্রতিচ্ছবি।
‘জীবন থেকে নেয়া’য় অভিনয় করেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ, খান আতা, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে। জহির রায়হান নিজেই সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলেন। এছাড়া আমজাদ হোসনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করেছেন চিত্রনাট্যও।
বাঙলা (২০০৬)
দেশ স্বাধীনের পর বাংলা সিনেমায় বিভিন্ন পরিবর্তন হতে থাকে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধকে সেলুলয়েড পর্দায় তুলে ধরা। অথচ তখন ভাষা আন্দোলনের কোনো ঘটনার জায়গা হলো না ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে।
অবশেষে ২০০৬ সালে সেই হাল ধরলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। ভাষা আন্দোলন নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমা ‘বাঙলা’ নির্মাণ করলেন তিনি। চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’ উপন্যাস অবলম্বনে। মূল চরিত্র একজন বোবা স্ত্রী। ভাষার জন্য মিছিল দেখে তারও ইচ্ছা করে চিৎকার করে বলতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’।
সেই বোবা স্ত্রী একসময় প্রথমবারের ‘বাংলা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারে। আর সঙ্গে সঙ্গে গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে। সিনেমার শেষ অংশে জানা যায় শহীদ আসাদের স্ত্রী ছিলেন তিনি। ‘বাঙলা’তে অভিনয় করেছেন শাবনূর, হুমায়ুন ফরীদি, মাহফুজ আহমেদসহ অনেকে।
ফাগুন হাওয়ায় (২০১৯)
ঢালিউডে ভাষা আন্দোলন নিয়ে তৃতীয় ও শেষ সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’। এটি নির্মাণ করেন তৌকির আহমেদ। টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ছবিতে এক মফস্বল শহরে ভাষা আন্দোলনের সময় মানুষের ভাবনা, আন্দোলন আর চেতনাকে রূপক অর্থে তুলে ধরা হয়েছে।
‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিশা, সিয়াম, আবুল হায়াত, ফারুক হোসেন, সাজু খাদেম, রওনক হাসান, শহিদুল আলম সাচ্চু ও বলিউডের অভিনেতা যশপাল শর্মাসহ অনেকে।
উল্লেখ্য, ‘জীবন থেকে নেয়া’র আগে ১৯৬৫ সালে জহির রায়হান ভাষা আন্দোলন নিয়ে আরও একটি সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তার কাহিনি অনুসারে চিত্রনাট্যও নির্মাণ করেন চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। কিন্তু সেখানে ৫২’র চিত্র সরাসারি উপস্থান করায় অনুমতি পাননি জহির রায়হান। তাই ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় ভাষা আন্দোলনকে ভিন্ন রূপে উপস্থাপন করেছিলেন।
এমআরএম