আগামী বছর থেকে স্কুল-কলেজে সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন
আগামী বছর থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নতুন কারিকুলামের পাইলটিং কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সাল থেকে সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে দুই দিন করে। পাশাপাশি নতুন কারিকুলামে যারা যুক্ত হচ্ছেন তারা এখন থেকেই সপ্তাহে দুই দিন ছুটি পাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ছুটি সপ্তাহে দুই দিন- শুক্র ও শনিবার। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুধু শুক্রবার। এই ছুটি বাড়াতে প্রস্তাব করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০২০ সালে এই প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির সিদ্ধান্ত ২০২২ সাল থেকে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছিল এনসিটিবি। তবে দুই মন্ত্রণালয় চাইলে যেকোনো সময় এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলেও সিদ্ধান্ত ছিল।
বর্তমানে বিদ্যমান সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য ছুটি ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে ক্লাস চলে ২১৫ দিন। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি চালু হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলবে বছরে ১৮৫ দিন।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন ছুটি থাকলেও শিক্ষার্থীদের বাসার যে কাজ দেওয়া হয়, তাতে লার্নিং আওয়ার কমবে না। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল সপ্তাহে দুই দিন ছুটি চালু রেখেছে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ কমবে।
নবম শ্রেণিতে বিভাগ থাকছে না
এনসিটিবি ভবনে নতুন কারিকুলামের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২৪ সাল থেকে নবম শ্রেণিতে সায়েন্স, আর্টস ও কমার্স বিভাগ থাকছে না। সব ছাত্রছাত্রী একই কারিকুলামে শিক্ষা অর্জন করবে।
দীপু মনি বলেন, শুধু জ্ঞান নয়, এর সঙ্গে দক্ষতা অর্জনই হলো নতুন কারিকুলামের উদ্দেশ্য। এখন পাইলটিং চলবে ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এতে সফল হলে ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়িত হবে। সে হিসেবে ২০২৪ সাল থেকে আর সায়েন্স, আর্টস ও কমার্স বিভাগ থাকছে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা দেখব নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দক্ষতাসম্পন্ন হচ্ছে কি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে কি না। আমরা যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক পাব, তখন নিজেদের সার্থক মনে করব।
তিনি বলেন, আগের পাঠক্রমে সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা ছিল না। সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন করতেই নতুন পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন পর নতুন একটি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও ল্যাবরেটরির প্রয়োজন হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান নিজেরা তা ম্যানেজ করতে পারে তো ভালো। আমরাও করে যাব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। এ কার্যক্রমে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘জুম’-এ যুক্ত ছিল। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, এনসিটিবি সচিব নাজমা আক্তার, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান প্রমুখ।
এএজে/এইচকে/জেএস