শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে একগুচ্ছ নির্দেশনা
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব বাংলাদেশে কমতির দিকে। তাই আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে তৈরি হয়েছে ‘গাইডলাইন’।
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করতে গাইডলাইনে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে। এখনই যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না তাদের জন্য দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠদান চালু থাকবে বলে গাইডলাইনে বলা হয়েছে।
গাইডলাইন অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর প্রথম ১৫দিন আনন্দঘন শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ পাঠক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রথম দুই মাসের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা বা মূল্যায়ন করা যাবে না। যখন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে তখন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনা করতে হবে। প্রতিটি শ্রেণিতে শিফট করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনতে হবে।
• যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না তাদের জন্য চালু থাকবে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠদান
• ক্লাস শুরুর প্রথম ১৫দিন আনন্দঘন শিখন কার্যক্রম
• প্রথম দুই মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা নয়
• সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস
কোনো শিক্ষার্থী সরাসরি ক্লাসে আসতে আগ্রহ প্রকাশ না করলে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে তাকে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কতজন দূরশিক্ষণে (টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন) ক্লাস করতে আগ্রহী তাদের তালিকা তৈরি করে অধিদফতরের পাঠাতে হবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে তাদের কোন পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর কত শতাংশ শিক্ষার্থীরা সরাসরি ক্লাসে আসতে চায় না এ তথ্য আমাদের কাছে পাঠাতে বলেছি। তথ্য পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
দূরশিক্ষণ ক্লাস কেন্দ্রীয়ভাবে নাকি স্কুল থেকে হবে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে অনাগ্রহীদের তালিকা পাওয়ার পর নির্ধারণ হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক
তিনি জানান, দূরশিক্ষণ ক্লাস কি কেন্দ্রীয়ভাবে হবে নাকি স্কুল থেকে হবে সেটা তালিকা পাওয়ার পর নির্ধারণ হবে। তবে কোনো অভিভাবক যদি এ অবস্থায় বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে না চান সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান থেকে জোরাজুরি করতে পারবে না। ওই শিক্ষার্থী যেন পাঠদানের মধ্যে থাকে সেজন্য গাইডলাইনে দূরশিক্ষণ ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার অপশন রেখেছি।
এ ব্যাপারে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চান না। তাই বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদানের অপশন রাখা হয়েছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই। তবে তাদের কোন পদ্ধতিতে দূরশিক্ষণে আনা হবে সেটা দ্রুত পরিষ্কার করার দাবি জানান তিনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে যা করতে হবে
• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামো এবং ভৌত সুবিধাদির ম্যাপিং করে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে একইসঙ্গে বা একই শিফটে সর্বোচ্চ কতজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা সম্ভব হবে, সবাইকে একইসঙ্গে আনা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে সবার শিক্ষা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
• স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আসন ব্যবস্থা কেমন হবে এবং কতজন শিক্ষার্থীকে একই শিফটে এনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে, তা পরিকল্পনা করতে হবে। গাইড লাইনে দেওয়া চিত্র অনুসরণ করে, শ্রেণিকক্ষের আয়তন ও সংখ্যা অনুপাতে শ্রেণিভিত্তিক কতজন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা যাবে তার সম্ভাব্য সংখ্যা নির্ধারণ করে পরিকল্পনা নিতে হবে।
উদাহরণ দিয়ে গাইড লাইনে বলা হয়, একটি শ্রেণিকক্ষে দুটি কলামে ৫টি করে মোট ১০টি বেঞ্চ/ডেস্ক আছে এবং ডেস্ক/বেঞ্চগুলোর দৈর্ঘ্য ৫ ফুটের কম। যেহেতু ডেস্ক/বেঞ্চগুলোর দৈর্ঘ্য ৫ ফুটের কম, সেহেতু প্রতিটি বেঞ্চে একজন করে মোট ৬ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে একটি ক্লাসে অংশ নিতে পারবে। প্রতিটি কলামে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বেঞ্চ দুটো সরিয়ে ফেলে প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম বেঞ্চে কমপক্ষে একটি বেঞ্চ অন্তর অন্তর তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
যদি বেঞ্চগুলো সরিয়ে ফেলার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বেঞ্চ দুটি একই জায়গায় রেখে ক্রস (ঢ) মার্ক করে দিতে হবে। যাতে সেখানে কোনো শিক্ষার্থী বসতে না পারে। এভাবেই তিন ফুট দূরত্ব মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই নিয়মে যদি বেঞ্চের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট বা তার বেশি হয়, তবে প্রতিটি বেঞ্চে দুই জন করে ছয়টি বেঞ্চে মোট ১২ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে একটি ক্লাসে অংশ নিতে পারবে।
• শিক্ষার্থীর সামর্থ্য ও চাহিদা বিবেচনায় এবং অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা করতে হবে।
• কোন কোন শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে, বা কোন কোন শিক্ষার্থী বিকল্প উপায়ে লেখাপড়া চালাবে বা দূরশিখনে যুক্ত হবে, সে বিষয়টি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদে পরিচালনার ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে আগ্রহী হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে সবাইকে সুযোগ দেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
• অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কম শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে বাকি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে। শুরুতে কোন কোন শ্রেণির কার্যক্রম দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হবে তা বিবেচনা করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবহিত করার পরিকল্পনা নিতে হবে।
• তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শ্রেণিকার্যক্রমের সময় ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকার্যক্রম একইসঙ্গে চালু করতে হলে কতটি শিফট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি শিফটের জন্য কর্মঘণ্টা কতটুকু হবে তা নির্ধারণের পরিকল্পনা নিতে হবে।
শিক্ষকদের যা করতে হবে
কোন কোন শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্লাস পরিচালনা করবেন এবং কোন শিক্ষককে বাড়তি সহায়তা দিয়ে দূরশিখন কার্যক্রম পরিচালনা করানো হবে, তার পরিকল্পনা করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলা-জেলা পর্যায়ের শিক্ষা অফিসের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা সাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে একাডেমিক ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের পরিকল্পনা করতে হবে।
এনএম/এইচকে