মাস্কে অস্বস্তি, তবু স্কুলে ফিরে স্বস্তি
করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত বছরের মার্চ মাসে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এতদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ তো রয়েছেই শিক্ষার্থীদের। কিন্তু করোনার কারণে বদলে যাওয়া বাস্তবতায় অনেক কিছু আর আগের মতো না হওয়ার আক্ষেপও রয়েছে।
স্কুল খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যরকম উচ্ছ্বাস থাকলেও দেখা গেল না সহপাঠীদের কাঁধে হাত রেখে গল্প বা হাঁটার মতো দৃশ্য। করোনার ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতিতে সব শিক্ষার্থীকে মুখে মাস্ক পরে আসতে হচ্ছে। আর যতটুকু সম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইন ধরে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ এবং বের হতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে, দীর্ঘ সময় মুখে মাস্ক পরে থাকা কষ্টের। আবার শ্রেণি কক্ষেও দূরত্ব মেনে বসতে হচ্ছে। কেউ কারও মুখ দেখতে পারছি না। আগের মতো সবাই এক জায়গায় বসে গল্প করা যাচ্ছে না। ছুটি শেষে স্কুলের মধ্যে ঘোরাঘুরি না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাসায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরেও আমরা স্কুলে ফিরতে পেরে খুশি।
এই শিক্ষার্থীদের আশা, ধীরে ধীরে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ইতিও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো দীর্ঘদিন পর আজ স্কুলে পা রেখেছে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে ইতি জানায়, ‘অনেক আনন্দ লাগছে। আজ অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবার সঙ্গে সবার অনেক কথা হয়েছে। তবে ৪ ঘণ্টা মুখে মাস্ক পরে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মাস্কের ভেতরে ঘামে ভিজে কেমন হয়ে গেছে। এতে খুব অস্বস্তি লাগলেও আমরা সবাই খুশি।’
মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা জাহানারা বেগমকেও কিছুটা উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। মেয়েকে দীর্ঘদিন পরে স্কুলে নিয়ে আসতে পেরে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে শুরু হয়েছে আজকে স্কুলে আসার প্রস্তুতি। ১৭ মাসের মতো বন্ধ থাকার কারণে স্কুল ব্যাগ এবং স্কুলের জুতার কোনো খবর ছিল না। ফলে, গতকাল নতুন জুতা ও ব্যাগ কিনতে হয়েছে। এরপর রাতে বই-পুস্তক ঠিক করে রাখা, সকালের টিফিন তৈরি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ছেলে-মেয়েরা আবার স্কুলে ফিরতে পারছে; আবার তাদের নিয়মিত লেখাপড়া শুরু হচ্ছে। এটাই একজন অভিভাবকের জন্য খুশির খবর।’
মাস্ক নিয়ে অভিযোগ একই স্কুলের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিনেরও। সাদিয়ার কথা- ‘সকালে ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা কষ্ট হলেও, স্কুলে ফিরতে পেরে আমি খুশি। আজ অনেক ভালো লাগছে। অনেক দিন পরে আমরা সব বন্ধুরা একে-অপরকে দেখতে পেয়েছি। সবাই খুশি। নিজেদের মধ্যে অনেক গল্প হয়েছে।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের এক শিফটের ছুটি শেষে দেখা গেছে- শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের হাত ধরে লাইন ধরে মোটামুটি সামাজিক দূরত্ব মেনে বেরিয়ে আসছে। আর স্কুলের মাইক থেকে বারবার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, কেউ যেন স্কুলের মধ্যে ঘোরাঘুরি না করে এবং দ্রুত বাসায় ফিরে যায়।
এএইচআর/এনএফ/জেএস