করোনার মধ্যেও সেশনজটমুক্ত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
করোনায় লণ্ডভণ্ড দেশের শিক্ষাখাত। প্রায় ১৭ মাস ধরে বন্ধ দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরাসরি ক্লাসের বিকল্প হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্মে পড়াশুনার উদ্যোগ নিলেও তেমন সুফল আসেনি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। মহামারির মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো সেশনজট হয়নি।
করোনার মধ্যেও বিভিন্ন ফি শতভাগ মওকুফ, মেধাবী ও অভাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি হিসাবে ১৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তাসহ বাবা-মা হারানো শিক্ষার্থীদের বিশেষ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশর্তবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। করোনার মধ্যেও দেশের প্রথম অনলাইন সমাবর্তন করেছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব তথ্য জানিয়ে বলা হয়, করোনাকালে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫০ লাখ টাকা অনুদান, সেনাবাহিনী ও পুলিশের মাধ্যমে অসহায়দের মধ্যে ১১ হাজার ব্যাগ ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সরকারকে পিসিআর মেশিন সরবরাহ, করোনায় আক্রান্তদের ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সেবা, জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এনজিআরআই) তাদের নিজস্ব গবেষণাগারে সার্স-কভ-২ জিনোমকে সিক্যুয়েন্স করে দেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ কৃতিত্ব অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
শিক্ষা কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক
করোনা মহামারি শুরুর পর শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনা নিয়ে আতঙ্কে পড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় টানা বন্ধ থাকায় সংকটে পড়লেও যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ভালভাবে ক্লাসই করতে পারছিল না, সেখানে নর্থ সাউথের সকল শিক্ষার্থীই সফলভাবে শেষ করেছে পুরো সেমিস্টার। গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত সেমিস্টার ফি মওকুফ করা হয়েছে। করোনার মধ্যে যেসব শিক্ষার্থীদের পরিবার চাকরি বা ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই সব পরিবারকে দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা।
নর্থ সাউথের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান জাহিদ বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমাদের কোনো সেশন লস হয়নি। প্রত্যেকটি সেমিস্টার যথাসময়ে শেষ হয়েছে। এখন নতুন সেমিস্টারের পড়ালেখা নিয়ে আমরা ব্যস্ত।
শুধু জাহিদ নন, তার মতো এ প্রতিষ্ঠানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন লেভেলের ২২ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থী করোনার মধ্যেই ডিজিটাল প্লাটফর্মে নির্বিঘ্নে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান এখন নর্থ সাউথের।
মহামারি মধ্যেও পড়াশুনা পুরোদমে চালিয়ে নিতে পারায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ বিভিন্ন দফতরের প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নর্থ সাউথের এসব কার্যক্রম অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুকরণীয় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে যুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে তিন হাজারেরও বেশি অনলাইন ক্লাস নিয়েছি, উপস্থিতির হার ছিল ৯৩ শতাংশের বেশি। একটা ক্লাসও মিস হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মোটিভিটেড ছিলেন বলেই আমরা সফল হয়েছি। আসলে শতভাগ সফলভাবে অনলাইনে শিক্ষাদান একটু কঠিন। তবে উদ্যোগী হলে কাজটি যে অসম্ভব নয়, তাই প্রমাণ করল নর্থ সাউথ।
জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, করোনার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ সেখানে সফল নর্থ সাউথ। বিশ্ববিদ্যালয়টির নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
করোনায় দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় যে স্থবিরতা তার ছোঁয়া নর্থ সাউথে লাগেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
১৮ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা
করোনা শুরু হওয়ার পর গত ১২ মাসে করোনাকালে তিন সেমিস্টারে সব শিক্ষার্থীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি মওকুফ করা হয়েছে। স্টুডেন্ট-অ্যাক্টিভিটি ফি শতভাগ মওকুফসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় ২০ শতাংশ ফি মওকুফ করা হয়েছে। মেধাবী ও অভাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি হিসাবে ১৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী তাদের বাবা-মা হারিয়েছেন তাদের জন্যও বিশেষ বৃত্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।
করোনা পরীক্ষার সহায়তার জন্য সরকারকে পিসিআর মেশিন, ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্তদের ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনসহ নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতির জনকের জীবন নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই বই প্রকাশ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’। যেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা দুই হাজার ১৭৮টি বই কর্নারে সংরক্ষিত আছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিনা বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন। এ পর্যন্ত মেধাবী ও চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
‘বিষয় ভিত্তিক কিউ এস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংস ২০২১’ এ টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্থান লাভ করেছে নর্থ সাউথ ।
এনএম /ওএফ