উপবৃত্তির ‘ডাটা এন্ট্রি’ ভোগান্তিতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা
গত পাঁচ বছর ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করে আসছিল রূপালী ব্যাংকের মোবাইল লেনদেন সেবা ‘শিওর ক্যাশ’। তবে গত নভেম্বর মাসে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ টাকা বিতরণের নতুন দায়িত্ব পায় ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা ‘নগদ’।
বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হওয়ায় পুরনো শিক্ষার্থীদের নতুন করে আবার ডাটা এন্ট্রি করতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, চার-পাঁচ ঘণ্টায় শিক্ষার্থী-অভিভাবক নাম, মোবাইল নম্বর, অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য আপলোড করা যাচ্ছে না। ফলে গত একমাসে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী ডাটা আপলোড করতে পারেনি। এতে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভোগান্তির বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কম্পিউটারের দোকানে চার-পাঁচ ঘণ্টাতেও প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে পারিনি। এখন সময় বাড়ানো হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে পারব কি-না জানি না।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুস সাকিব খান কনা বলেন, তিন দিন ধরে চেষ্টা করেও সার্ভারে শিক্ষার্থীদের তথ্য আপলোড করতে পারিনি। দুই-তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে এক জন শিক্ষার্থীর তথ্য আপলোড হচ্ছে।
তিনি বলেন, সার্ভারে কাজ করছে না। আমাদের এলাকায় ইন্টারনেটের যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা আছে। গত মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা দিতে পারছে না। আবার শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্রের মিল নেই। এসব সমস্যার কারণে তথ্য আপলোড করতে সমস্যা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. তামান্না আক্তার বলেন, ডাটা এন্ট্রি দিতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের স্কুলে নয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সবার বায়োডাটা, জন্ম সনদের তথ্য আপলোড করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। সারা রাত জেগে বারবার চেষ্টা করেও সার্ভারে তথ্য আপলোড করতে পারছি না।
রাজধানীর ইসলামবাগ আশ্রাফাবাদ সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থী তানভীরুল ইসলামের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ১৭ জানুয়ারির মধ্যেও তথ্য আপলোড করতে পারব কি না জানি না। প্রথমবার যে সমস্যা ছিল দ্বিতীয়বারও একই সমস্যা আছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইলও বন্ধ। অনেক অভিভাবকের এনআইডি কার্ড আপডেট নেই। কেউ কেউ আইডি কার্ড তুলতে পারছেন না। আবার কারও মোবাইল নিবন্ধন আইডি কার্ডের নামের সঙ্গে মিল নেই। এসব কারণে অন্তত এক মাস সময় বাড়ানো দরকার। না হলে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হবে।
জানা গেছে, ডাটা এন্ট্রি শুরুর পর থেকেই নগদের সার্ভার ডাউন পাওয়া যায়। এতে গত এক মাসের নির্ধারিত সময়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেতে ডাটা এন্ট্রি করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে ডাটা এন্ট্রির সময় বাড়িয়ে আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। এরপর আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না বলে উপবৃত্তি প্রকল্প থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ডাটা এন্ট্রির পর থেকে নানা সমস্যা হচ্ছিল। সে কারণে আবার সময় বাড়ানো হয়েছে। সার্ভারের সমস্যা সমাধান হয়েছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে নগদ। এখন যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ডাটা এন্ট্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, রোববার (১০ জানুয়ারি) দেশের সব জেলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে উপবৃত্তি প্রকল্পের পক্ষ থেকে।
এতে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের চতুর্থ কিস্তি (এপ্রিল থেকে জুন) উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের লক্ষ্যে সুবিধাভোগীদের তথ্যগুলো প্রাথমিকের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্পের ‘পিইএসপি নগদ পোর্টাল’–এ লাইভ এন্ট্রিসহ মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সকল যাচাই-বাছাই কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
এ সময়সীমা এর বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বিধায় নগদ এবং মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
এনএম/এফআর