এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার বিকল্প পদ্ধতি ঘোষণা শিগগিরই
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবারের সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার। খোলার পর ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস।
এদিকে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। তাই দুইবার তারিখ দিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া এ বছর যে সম্ভব হবে না তা মোটামুটি নিশ্চিত।
চলতি জুলাই মাসে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঈদের পর পর এ ঘোষণা দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএসসি ৬০ দিন ও এইচএসসি ৮৪ দিন সরাসরি ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নিতে হলে কমপক্ষে আগস্টে মাসের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। কারণ ৬০ দিন ক্লাস করোনার পর পরীক্ষার আগে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় দিতে হবে প্রস্তুতির জন্য। আবার পরীক্ষা নিতে কমপক্ষে ২৫ দিন সময় লাগবে। অন্যদিকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ দিন বিরতি দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতে হবে।
সে হিসাব করে দেখলে জুলাই মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারলে কোনো অবস্থাতেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি বছর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে জুলাই মাস পুরোটাই ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলেছেন, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো ঝুঁকিতে তারা যাবে না।
এ অবস্থায় চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষা স্বাভাবিক এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে এবার এই দুটি পাবলিক পরীক্ষার না নিতে পারলেও বিকল্প পদ্ধতিতে গ্রেড দেওয়া হবে। গত বছরের মতো অটো পাস দেওয়া হবে না।
পরীক্ষা নিতে না পারলে অনেক বিকল্প চিন্তার করছে এ সংক্রান্ত গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।
ঈদের পর পর পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বেগ দূর করতে পরীক্ষার বিকল্প কী কী হতে পারে তার রোডম্যাপ প্রকাশ করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, যেহেতু আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না, তাই যত বিকল্প পদ্ধতি আছে সেগুলোর প্রস্তুতি শেষ করে রাখছি। যখন যেটা প্রয়োগ করা যায়, সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।
বিকল্প কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষাবোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারাই পরীক্ষার বিকল্প মতামত দেবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মূল্যায়ন করেই শিক্ষার্থীদের গ্রেড দেওয়া হবে। সেজন্য যত রকম বিকল্প আছে সবগুলো নিয়েই বিশ্লেষণ চলছে।
জানা গেছে, কমিটির একাধিক প্রস্তাব আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন (সিকিউ) বাদ দিয়ে কেবল বহু নির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেওয়া। বিষয় ও পূর্ণমান (পরীক্ষার মোট নম্বর) কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের দুই পত্র একটিতে একীভূত করা।
পাশাপাশি ২০০ নম্বরের স্থলে ১০০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু এই উভয় ক্ষেত্রেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। অর্থাৎ সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কেন্দ্রের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আরও একটি দিক ছড়িয়ে পড়েছে। সেটি হচ্ছে, আগের ফল এবং অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়নের ওপর এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের গ্রেড দেওয়া।
এর মধ্যে এসএসসির সম্পর্কে বলা হচ্ছে, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ৫০ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্টের ৫০ শতাংশ ফলাফল নিয়ে ফল প্রস্তুত করা হতে পারে। আর এইচএসসির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীর এসএসসির ফলের ৫০ শতাংশ, জেএসসির ২৫ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্টের ফলের ২৫ শতাংশ সমন্বয় করে ফল প্রস্তুত করা হতে পারে।
সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে থাকে। কিন্তু গতবছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রায় ৩ কোটি ছাত্রছাত্রীর মতোই এ দুই পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সরাসরি ক্লাসরুমে বসতে পারেনি। এদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা নবম শ্রেণিতে স্বাভাবিক লেখাপড়া করলেও দশম শ্রেণিতে আড়াই মাস স্কুলে যেতে পেড়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর ৭-৮ মাস ক্লাস করতে পেরেছে। দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেছে অটোপাস নিয়ে। এই শ্রেণিতে একটি দিনও ক্লাস করতে পারেনি। এবার এসএসসি ও এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী প্রায় ৩৭ লাখ। মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে মার্চ মাস থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দুটি কমিটি করা হয়। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি মিললেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে এই কমিটি সায় না দেওয়ার পর কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়, সেই পন্থা বের করতে কাজ দেওয়া হয় কমিটিকে। একাধিক বৈঠকে ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রস্তাব এসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এনএম/এমএইচএস