করোনার মধ্যেও খুশির বার্তা পেলেন শিক্ষকরা
করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে ছিল সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি। একই অবস্থা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও। এমনকি সরকারি কর্ম কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরও নিয়োগ আটকে ছিল মাধ্যমিক স্কুলের ২ হাজার ১২১ জন শিক্ষকের। অবশেষে এসব পদোন্নতি ও চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
করোনার মধ্যে এ পদোন্নতিকে খুশির বার্তা হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা। তবে করোনার কারণে আটকে আছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম। সব প্রস্তুতি শেষ করে রাখলেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিক্ষকরা বলছেন, করোনার মধ্যে শিক্ষকদের পদোন্নতি ও আটকে থাকা নিয়োগ শুরু করায় তারা খুশি। এর মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো পদোন্নতি পেলেন সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা। একসঙ্গে ৫ হাজার ৪৫২ জনের পদোন্নতি এর আগে কখনো হয়নি। তিন বছর আটকে থাকার পর পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও। ১ হাজার ৮৪ জনকে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ তিন বছর পর পদোন্নতির দেখা পেলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার (২৯ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ১ হাজার ৮৪ জন সহকারী অধ্যাপককে পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়।
এদিকে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে আড়াই হাজার শিক্ষকের তালিকাও প্রস্তুত আছে। যেকোনো সময় বিভাগীয় পদোন্নতির সভা ডাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পেয়েও পদোন্নতি না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা। অবশেষে সে পদোন্নতির জটও খুলতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনাকালীন সরকারের এসব পদক্ষেপে খুশি শিক্ষক সমাজ। তবে এসব পদোন্নতি ও নিয়োগ যেন প্রতি বছর ও সময়মতো হয় সেই দাবি জানিয়েছেন তারা।
তিন বছর পর পদোন্নতির দেখা পেলেন ১০৮৪ জন
দীর্ঘ তিন বছর পর পদোন্নতির দেখা পেলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার (২৯ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ১ হাজার ৮৪ জন সহকারী অধ্যাপককে পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়। ২২, ২৪ ও ২৬ এ তিনটি বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৩৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর এ পদে তিন বছর ধরে কোনো পদোন্নতি হয়নি। তবে গত বছর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার পর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত থাকলেও কার্যকর করতে এক বছরের বেশি সময় লেগেছে।
অন্যান্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি হয়ে থাকে। যে কারণে অন্যান্য ক্যাডারের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তা দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র হয়ে যান। এতে কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তবে পদোন্নতি জট খুলতে শুরু করায় খুশি তারা।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, আমরা এমনিতেই অন্যান্য ক্যাডার থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি আটকে থাকায় অনেকে বঞ্চিত হয়। এতে অনেকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। আমাদের প্রত্যাশা, পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য সবাইকেই দ্রুত যেন পদোন্নতি দেওয়া হয়। আশা করি, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি যেন দ্রুত দেওয়া হয়।
সহকারী অধ্যাপক পদে আড়াই হাজারের তালিকা প্রস্তুত
প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতির জট খুলছে শিগগিরই। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সেই পদোন্নতির জন্য দ্রুতই বিভাগীয় পদোন্নতি সভা (ডিপিপি) ডাকা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু পদোন্নতির জট খুলছে, আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে প্রভাষক পদের পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে রেখেছে। লকডাউন উঠে গেলে পদোন্নতি সভা ডাকা হবে।
জানা গেছে, মাউশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৭ থেকে ৩৩তম ব্যাচ পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৮ জন প্রভাষককে পদোন্নতি দিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেন ২ হাজার ৪৩৭, আর আত্তীকৃত ৯১ জন। এ পদে সর্বশেষ ২০১৮ সালের অক্টোবরে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
পদোন্নতি বঞ্চিতরা বলছেন, একই বিসিএসে প্রশাসন, পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপ-সচিব হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। অথচ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখনও এন্ট্রি পদেই আটকে আছেন।
উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, ২৮তম বিসিএসে অন্যান্য ক্যাডারে দুটি, কোথাও একটি পদোন্নতি হলেও শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা ১১ বছর ধরে প্রভাষক পদেই আটকে আছেন।
প্রথমবারের মতো পদোন্নতি পেলেন ৫৪৫২ জন সহকারী শিক্ষক
দেশে প্রথমবারের মতো সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ৫ হাজার ৪৫২ জন সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩০ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে তাদের পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
মাউশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৭ থেকে ৩৩তম ব্যাচ পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৮ জন প্রভাষককে পদোন্নতি দিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেন ২ হাজার ৪৩৭, আর আত্তীকৃত ৯১ জন। এ পদে সর্বশেষ ২০১৮ সালের অক্টোবরে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, নানা জটিলতার পর জ্যেষ্ঠ শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো। পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এখন থেকে ৯ম গ্রেডে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
পদোন্নতি কমিটির সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা জটিলতার পর শিক্ষকরা এ পদোন্নতি পেলেন। ভবিষ্যতে এ পদোন্নতি অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় সংশোধনী এনে সিনিয়র শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়। তার আলোকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে গ্রেডেশন (জ্যেষ্ঠতা) অনুযায়ী ৭ হাজার ২৭৫ জনের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতে ৫ হাজার ৪৫৪ জনকে সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সহকারী শিক্ষকদের কাজের গতি বাড়াতে এবং দায়িত্বশীল করে তুলতে নতুন আরেকটি পদ সৃষ্টি করে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দীন মাহমুদ সালবি।
তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা খুবই খুশি। দীর্ঘদিন পর এ পদোন্নতির জটিলতা খুলেছে। আমরা চাই দ্রুত আরও পদোন্নতি দেওয়া হোক।
সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ২১২১ জনের নিয়োগ যেকোনো সময়
সারাদেশে ৩১১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দূর করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ১৫৫ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে পিএসসি। এরপর নানা জটিলতায় তাদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। অবশেষে তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে প্রার্থীদের ডোপ টেস্টসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর চূড়ান্ত নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিএসসির তালিকাভুক্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হলে তাদের নিয়োগ দেওয়া শুরু হবে।
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জট খুলছে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিলেও সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়ে একজন শিক্ষকও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পাননি। প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি করে ২০১৪ সালে গেজেট প্রকাশ করলেও নানা জটিলতায় সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি হয়নি। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে সুযোগ থাকার পরও পদোন্নতি না পেয়ে হতাশ শিক্ষকরা। অবশেষে দীর্ঘদিনের এই জট এবার খুলতে যাচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলার সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে মে মাসে পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এ উপজেলার সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতা তালিকায় ২৬৩ জনের নাম রয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিযোগ্য ১৯টি পদের বিপরীতে ৪০ জন শিক্ষকের এসিআর, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পণ্ডিত ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির করায় পদোন্নতি দিতে পিএসসির সুপারিশ লাগে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মতামত পেলে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে মতামত জানানো হবে।
এনএম/এসকেডি/জেএস