শিগগিরই ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ৩০ এপ্রিল নিবন্ধনধারীদের এ আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়। আবেদনের এক মাসের মধ্যে নিয়োগের কথা থাকলেও হাইকোর্টের রায়ে তা স্থগিত হয়ে যায়।
তবে নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, আমাদের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা আছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করা হয়েছে। আগামী সোমবার শুনানির কথা রয়েছে। সেদিনের শুনানি যদি এনটিআরসিএর পক্ষে আসে, তাহলে দু-একদিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ সম্ভব। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা চাই খুব দ্রুতই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে। কারণ আমাদের স্কুলগুলোতে অনেক শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। আমরা সেগুলো পূরণ করতে চাই। কিন্তু এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাই মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে। শিক্ষক নিয়োগের গাইডলাইনে বলা হচ্ছে জাতীয় মেধাক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগ। এর ফলে যাদের রেজাল্ট ভালো এবং সামনের সারিতে রয়েছেন তারাই আগে নিয়োগ পাবেন। এতে তুলনামূলক বেশি নম্বরধারী নিবন্ধিতরা উপযুক্ত জায়গায় যেতে পারবেন।
সম্মিলিত তালিকার কথা উল্লেখ করে অতিরিক্ত সচিব বলেন, এখন কেউ যদি ৪০ নম্বর পেয়ে নিয়োগের জন্য রিট করেন, তবে তাকে নিয়োগ দিয়ে দিলে যিনি ৮০ মার্ক পেয়েছেন তিনি বঞ্চিত হবেন। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন রিটকারী দেড় হাজার শিক্ষককে চার সপ্তাহ অর্থাৎ জুনের মধ্যে নিয়োগ দিতে। কিন্তু সে নির্দেশ অনুযায়ী নিয়োগ দিতে গেলে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার এ দেড় হাজার শিক্ষককে নিয়োগ দিলে আরও অনেকেই রিট করবেন। তখন বিষয়টি আরও বেশি জটিল হয়ে যাবে। তাই এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে।
মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, এর আগেও সম্মিলিত তালিকা থেকে জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে। এতে শিক্ষকের মহান পেশায় প্রকৃত মেধাবীরা নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা আশা করছি, আপিলের রায় এনটিআরসিএর পক্ষে আসবে এবং যাদের নম্বর বেশি আছে তারা নিয়োগ পাবেন।
তিনি বলেন, শুনানির পর রায় হলে দু-একদিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ লাগতে পারে। কারণ সবকিছুই রেডি। সফটওয়ারেই নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা অটো (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) নির্ধারিত হবে। সেখানে আমাদের কারও হাত থাকবে না। যাদের নম্বর বেশি আছে তারা বঞ্চিত হোক, তা কোনোভাবেই চাই না। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশি নম্বরধারীরা জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ পাবেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছিলেন। ওই রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল সম্মিলিত মেধাতালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারী (১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারী) এবং অন্যান্য আবেদনকারীদের নামে সনদ জারি করা। কিন্তু দুই বছরেও রায় বাস্তবায়ন না করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি করে ২০১৯ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ৫৪ হাজার পদের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। এরপর নিয়োগ থেকে বিরত থাকতে একটি আবেদন করেন রিটকারীরা। হাইকোর্ট গত ৬ মে এ রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৩ জুন আপিল করে এনটিআরসিএ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা জানান, রিটকারীদের পক্ষে আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটি চ্যালেঞ্জ করে আমরা আপিল করেছি। সোমবার আপিলের শুনানি কথা রয়েছে। শুনানিতে রায় আমাদের পক্ষে থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। আদালতের স্থগিতাদেশ পেলে চলতি সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি শান্ত আহমেদ বলেন, সারাদেশের বেকার নিবন্ধিত শিক্ষকেরা আর বসে থাকবে না। তারা বুঝে গেছে তাদেরকে আর বসে থাকলে হবে না। নিবন্ধনধারীদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। আমাদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে সুখবর দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি এনটিআরসিএ।
তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে নিবন্ধনধারীরা দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন। তারা যেহেতু কষ্টের টাকায় আবেদন করেছেন, সেহেতু গণবিজ্ঞপ্তির ফলের জন্যেও রাজপথে নামতে প্রস্তুত। আর বসে থাকবেন না কেউ। যৌক্তিক দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি আসবে শিগগিরই।
এনএম/আরএইচ