ডিজিটালাইজড হচ্ছে কওমি মাদরাসার পরীক্ষার কার্যক্রম
কওমি মাদরাসার পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছে কওমি মাদরাসার নিয়ন্ত্রণকারী শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আদলে কেন্দ্রীয়ভাবে সব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংরক্ষণ করতে ‘এক্সামিনেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি শক্তিশালী অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে কওমি মাদরাসার সনদ দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
বুধবার (১৬ জুন) কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ হাইআতুল উলয়ার কার্যালয়ে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ স্থায়ী কমিটির সভায় বোর্ডের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র ও ফলাফল সংগ্রহ এবং সনদপত্র সংক্রান্ত সব কাজ অনলাইনেই করতে পারবেন। পরীক্ষার ফলাফলও অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। ফলাফল প্রকাশের পরই পরীক্ষার্থীরা তাদের সাময়িক সনদ, মার্ক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এ সফটওয়্যারে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী, মাদরাসা ও বোর্ডের জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল থাকবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করা যাবে। অটো রোলশিট জেনারেটের মাধ্যমে সহজেই পরীক্ষার ফলাফল ও পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিসংখ্যান প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করা যাবে।
জানা গেছে, বুধবার সফটওয়্যার ও সনদ বিষয়ক সাব-কমিটির সভা হয়েছে। এতে ২০২২ সাল থেকে মূল সনদ ও নম্বরপত্রের জন্য কোনো ফি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সাময়িক সনদের ফি ২০০ টাকা, নম্বরপত্রের ফি হবে ১০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সাময়িক সনদ বা নম্বরপত্র হারিয়ে গেলে ডুপ্লিকেট সাময়িক সনদ ও নম্বরপত্রের ফিও অনুরূপ হবে। মূল সনদ বা নম্বরপত্র হারিয়ে গেলে পুনঃসনদের ফি হবে ২০০ টাকা, প্রতি ভাষার নম্বরপত্রের ফি হবে ১০০ টাকা।
আল হাইআতুল উলয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মূল সনদ ও নম্বরপত্র বোর্ডে প্রেরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। প্রত্যেক ছাত্রের নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম ও সকল মাদরাসার নাম বাংলা, আরবি ও ইংরেজি শুদ্ধ বানানে সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে যাবে। যদি সংগ্রহ করাও যায়, তবু এত শিক্ষার্থীদের তথ্য কম্পিউটারে তোলা বা হাতে লেখার জন্য অনেক জনবল লাগবে এবং প্রচুর পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হবে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মূল সনদ পরীক্ষার্থীরা স্বয়ং উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে আল-হাইআতুল উলয়ার কার্যালয় থেকে সনদ ও নম্বরপত্র সংগ্রহ করতে হবে। অথবা প্রতি সনদপ্রার্থীর জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম পৃথক পৃথকভাবে পূরণ করে মাদরাসার প্যাডে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও সত্যায়নসহ আল-হাইআতুল উলয়ার কার্যালয়ে জমা দিলে সনদ ও নম্বরপত্র প্রস্তুত করে আল-হাইআতুল উলয়া মাদরাসায় পাঠিয়ে দেবে। অন্যথায় পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে আল-হাইআতুল উলয়ার ই-মেইলে প্রেরণ করবে। আল-হাইআতুল উলয়া সনদ ও নম্বরপত্র প্রস্তুত করে আবেদনকারীকে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে সনদ ও নম্বরপত্র সংগ্রহ করার কথা জানাবে।
শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত আবেদন ফরম তৈরি করতে হবে ও অনলাইন থেকে ডাউনলোড করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আবেদন ফরমে জন্মনিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের ঘর থাকবে। প্রস্তুতকৃত মূল সনদ ও নম্বরপত্রে এই নম্বর উল্লিখিত হবে।
প্রেসে ছাপানো কাগজে মূল সনদ ও নম্বরপত্র প্রিন্ট করার পরিবর্তে আল-হাইআতুল উলয়ার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উন্নত ছাপার মেশিনে ডিজাইনসহ সনদ ও নম্বরপত্র ছাপানো যায় কি-না এবং এর জন্য কী ধরনের মেশিন, কতটুকু স্থান, কী পরিমাণ জনবল ও অর্থ লাগতে পারে, কাগজের নমুনা ও ডিজাইনসহ আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে অফিস সম্পাদককে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের যোগাযোগ কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, সনদ ডিজিটালাইজড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর জন্য কিছু করণীয় আছে। সেগুলো দ্রুতই শেষ করে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম অনলাইন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হবে।
বোর্ডের সদস্য মুফতি নুরুল আমিন বলেন, এটা কাজের অগ্রগতির অংশ। সংশ্লিষ্টদের সব নির্দেশনা দেওয়া আছে। সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এনএম/ওএফ