বাজেটে এমপিওভুক্তির বরাদ্দ নিয়ে ধোঁয়াশা, আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি
‘এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকছে’- বাজেট ঘোষণার আগে এমন খবর ছিল শিক্ষকদের কাছে। তবে তা সত্য হয়নি। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বরাদ্দ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। এতে হতাশ হয়েছেন সাত হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয় উল্লেখ নেই। শুক্রবার (৪ জুন) বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে লিখিত প্রশ্ন করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী হতাশায় ভুগছেন। এমওপিভুক্তিতে বরাদ্দ রাখা না হলে তারা আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে ৭১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মুজিববর্ষে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ঈদ বোনাস, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকরা বাজেট নিয়ে খুশি হতে পারেননি।
জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর পর ২০১৯ সালে দুই হাজার ৫৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। তখন এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এরমধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ১৪১টি প্রতিষ্ঠান বাতিল করা হয়।
পরবর্তী দুই বছরে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে সারা দেশে সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পৌনে দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন।
নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সংশোধিত এমপিও নীতিমালা জারি করেছে। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে এমওপিও খাতে বরাদ্দ রাখা হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন বাজেট বক্তৃতায় ঘটেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা খাত নিয়ে কোনো চমক ছিল না। তিনি বিগত বছরের কার্যক্রমই তুলে ধরেছেন। যদি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতো তাহলে বাজেট বক্তৃতায় তা অবশ্যই উল্লেখ করতেন অর্থমন্ত্রী। কারণ, বাজেটে শিক্ষা খাতের প্রধান চমকই হলো এমপিওভুক্তি। সারা দেশের শিক্ষকরা এই ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করেন।
তবে যেহেতু চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে চার হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা খাতে, সেহেতু সরকার ইচ্ছা করলে এ বরাদ্দ থেকে বা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারে।
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, বাজেটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও তারা কিছু বলতে পারেননি। আমাদের দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন। বাজেটে এমপিওখাতে বরাদ্দ রাখা না হলে আন্দোলন ছাড়া উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সরকার সামান্য অনুদান দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক অনুদান তুলতে পারেননি। এমপিওভুক্তি না করলে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ আছে কি না তা বিস্তারিত বাজেট দেখে জানা যাবে। দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা এ ব্যাপারে জানতে পারব।
এনএম/ওএফ/জেএস