উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সায়েন্স কার্নিভাল অনুষ্ঠিত

ঐতিহ্যবাহী উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী সায়েন্স কার্নিভাল-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ৩২টি স্কুল কলেজের অংশগ্রহণে ২২২টি প্রজেক্টের আওতায় ৫টি গ্রুপে অন্তত ৫২৫ জন শিক্ষার্থী এই সায়েন্স কার্নিভালে অংশগ্রহণ করেন।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে সায়েন্স কার্নিভালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। কার্নিভালের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ছিল- স্কয়ার গ্রুপ এবং মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল- ঢাকা পোস্ট, জাগো নিউজ, যমুনা টেলিভিশন প্রমুখ।
এর আগে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় সায়েন্স কার্নিভালের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান পিএইচডি। এসময় তিনি উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আরিফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রজেক্ট ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেন।
কার্নিভালের প্রথম দিন সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় দিন আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকেল ৩টায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট এবং বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
কার্নিভালে রাজধানীর ৩২টি স্কুলের অন্তত ২২২টি প্রজেক্টের আওতায় ৩২ স্কুলের ৫২৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে অলিম্পিয়াড ৫টি গ্রুপ ও অন্যান্য ১৩টি ইভেন্ট মিলিয়ে মোট ৪৪১ জন অংশ নেয়।
সায়েন্স কার্নিভালের শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট ঘুরে দেখা যায়, উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও অন্যান্য বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব প্রজেক্টের নমুনা এনেছেন। তারা সেগুলো দর্শনার্থী ও শিক্ষকদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন।
উদয়ন স্কুলের ৩ ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাসনিম ইবনে শরিয়ত, আরিব জিয়া ওয়াফি, একেএম আশরাফুল হক তৈরি করেছেন ‘মর্ডান সিভিলাইজেশন’র একটি মডেল। যেখানে একটি শহরকে কত সহজে টার্বাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব করা যায় তা দেখানো হয়। তাছাড়া, ভূমিকম্প হলে তারও আগাম নির্দেশনা দেই এই মডেলটি।
আরও পড়ুন
মাশরু, জিহাদ, রাফসান এই তিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী মিলে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের একটি মডেল উপস্থাপন করেন যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই নিউটনের ৩য় সূত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবে।
মারিয়াম মোশাররফ সাফা তৈরি করেছে এয়ার পিউরিফিকেশন সিস্টেম। যার মাধ্যমে জনবহুল শহরের বাতাসের বিষাক্ত কার্বন শোষণ করা যাবে।
ফ্লাড মনিটরিং সিস্টেম প্রজেক্টের ধারণা প্রদানকারী ক্ষুদে বিজ্ঞানী ফারহান বলেন, আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রজেক্ট তৈরি করেছি। এগুলো আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় ভালো কিছু করার। আমি সুযোগ পেলে দেশ ও দেশের বাইরে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।
আরেক ক্ষুদে বিজ্ঞানী রাফসান বলেন, আমরা চাই এমন আয়োজন নিয়মিত হোক এবং শিক্ষার্থীরা এতে আরও বেশি অংশগ্রহণ করুক। এতে দেশে বিজ্ঞান প্রিয় শিক্ষার্থী বাড়বে এবং তারা দেশ ও বাইরে সুনাম অর্জন করবে।
উদয়ন সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অহিন আরাবী বলেন, প্রতি বছর আমরা সায়েন্স কার্নিভাল করে থাকি। এবারও আমরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্কুল কলেজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই কার্নিভাল করছি। আয়োজন সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে আমরা চেষ্টা করেছি।
কার্নিভালের কনভেনার উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মিসেস আসমা খাতুন বলেন, আমরা প্রতি বছর সায়েন্স কার্নিভাল করে থাকি। তবে এর আগে এত বৃহৎ পরিসরে এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে এমন প্রোগ্রাম আয়োজিত হয়নি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মেধা বিকাশের পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন স্কিল, বিজ্ঞান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে।
উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে সুন্দর সুন্দর প্রজেক্ট তুলে ধরেছে তা সত্যিই অসাধারণ। তাদের প্রজেক্টগুলো দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সায়েন্স ফ্যাকাল্টির অনেক শিক্ষক প্রশংসা করেছেন। আমরা যদি এসব প্রজেক্ট কাজে লাগাতে পারি তাহলে বাংলাদেশের বড় বড় সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে। আমি মনে করি, যদি এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দেওয়া যায় এবং এই আইডিয়াগুলো কাজে লাগানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ থেকেও নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী তৈরি হবে।
কেএইচ/এমএ