আইইউবির ২৫তম সমাবর্তনে সনদ পেলেন ১ হাজার ৯৬৯ শিক্ষার্থী

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ১ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর ২৫তম সমাবর্তন।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত আইইউবি ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ৫৫০ জন স্নাতক ও ৪১৯ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। এতে কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী দুই স্নাতক শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব এবং সনদ প্রদান করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ যারা স্নাতক হলে, ভবিষ্যতে যা কিছুই করো না কেন, কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে তোমাদের দুটো অস্ত্র থাকতে হবে। বন্দুক-কামান নয়, অন্য অস্ত্র, যা দিয়ে তুমি গোটা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। তার মধ্যে একটি হলো ইংরেজি বলা ও লেখার দক্ষতা। আরেকটি হলো কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা। এ দুরকম দক্ষতা থাকলে তোমরা যে কোনো কর্মক্ষেত্রেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যদি কোনো দায়িত্ব নাও, সেটা সঠিকভাবে পালন করাই তোমার কর্তব্য। এমন কোনো পেশা বেছে নিও না, যা তোমার পছন্দ নয়। যেটা ভালো লাগে সেটাই করো, কারণ জীবনে প্রকৃত তৃপ্তি তখনই আসবে, যখন তুমি তোমার কাজ উপভোগ করবে। এটাই সময়, যদি আংশিকভাবে কোনো পেশার দিকে এগিয়ে গিয়েও থাকো, তবু মনে রেখো, কিছুই চূড়ান্ত নয়। এখনো তোমার সামনে সুযোগ আছে। চিন্তা করো, কোন পথটি তোমার জন্য সবচেয়ে ভালো। ধরো, তুমি একজন প্রকৌশলী কিন্তু অনেক প্রকৌশলীই সমাজকর্ম, অর্থনীতি কিংবা অন্য ক্ষেত্রেও কাজ করেন। মানুষ বদলায় কিন্তু সেই পরিবর্তনটা হতে হবে অর্থবহ ও আন্তরিক।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান বলেন, উন্নতির মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে উদ্ভাবনের মাঝে। তাই আমাদের এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সৃজনশীলতা ও নতুন ধারণা বিকশিত হতে পারে। আমি আশাবাদী হই যখন দেখি আইইউবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন প্রযুক্তির প্রসার ঘটাচ্ছে এবং গবেষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি সমাজে পড়ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডেটা সায়েন্স থেকে স্বাস্থ্যসেবার উদ্ভাবন– বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এ ক্ষেত্রগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও নতুন সমাধান তৈরির সক্ষমতার ওপর, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
আইইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিদার এ হোসেইন বলেন, কেউই একা চলতে পারে না। আমরা আমাদের দেশ, আমাদের জাতির অংশ। মানুষ অন্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা কারণ আমরা একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারি, একে অপরকে অনুভব করতে পারি। যদি আমাদের মাঝে সহমর্মিতা না থাকে, তাহলে দেশের এগিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদেরই দায়িত্ব। এটি কোনো বড় কিছু নয়, শুধু অভ্যাসের অংশ করে নিতে হবে। এভাবেই আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের তরুণ প্রজন্মই এ পথচলায় আমাদের অগ্রদূত– আইইউবির জন্য, দেশের জন্য।
উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম স্নাতকদের তিনটি পরামর্শ দেন, জিজ্ঞাসু হও। শেখার কোনো শেষ নেই, এটি আজীবন চলতে থাকে। তোমরা যত এগিয়ে যাবে, ততই নতুন কিছু জানার প্রয়োজন হবে। কৌতূহল ছাড়া শেখা সম্ভব নয়। এক মুহূর্তের জন্য পেছন ফিরে দেখো। আইইউবিতে যে শিক্ষা পেয়েছো, একাডেমিক হোক বা ব্যক্তিগত– সেটাই তোমার ভবিষ্যতের পাথেয়। আজ থেকে তোমার নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে, সেখানে তোমার দায়িত্ব অনেক। দায়িত্বের শুরু হবে তোমার নিজের থেকে, তারপর তোমার পরিবার, তোমার বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ এবং দেশ– এই সব কিছুর প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে।
মূল অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক পর্বে জনপ্রিয় শিল্পী মিনার রহমান এবং ব্যান্ডদল চিরকুটের পাশাপাশি সংগীত পরিবেশন করেন আইইউবির শিক্ষার্থীরা।
এমএম/এসএসএইচ