ড. ইউনূসের ‘বিচার চাওয়া’ গৌতমই হলেন ইউএসটিসির উপাচার্য
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
ড. গৌতম ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল টানা ৮ বছর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ভিসি ছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও তার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অত্যন্ত অনুগত ছিলেন তিনি। এছাড়া আরেক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এলাকার হওয়ায় তারও আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন ড. গৌতম। ভিসি থাকাকালে গৌতমের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। দুর্নীতির টাকায় তার বিরুদ্ধে পদ-পদবি টিকিয়ে রাখা এবং নানা পুরস্কার কিনে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছর বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। ওইসময় ওই ঘটনায় উল্টো প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ২০১ জন কৃষিবিদ। অর্থাৎ তারা ড. ইউনূসের বিচার দাবি করেছিলেন। কৃষিবিদদের এই তালিকায় ছিলেন ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ।
সিভাসুর একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, টানা ৮ বছর ভিসি থাকাকালে ড. গৌতম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রলীগের ক্যাডারদের চাকরি দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট করে তিনি টাকার বিনিময়ে চাকরি, পদোন্নতি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন।
আরও পড়ুন
এদিকে, বিতর্কিত ও আওয়ামীপন্থি এ শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে তোলপাড় চলছে। তার নিয়োগ দ্রুত বাতিলের দাবি উঠেছে। গৌতমের নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হলে সিভাসুর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা এর প্রতিবাদ জানান। কয়েকজন শিক্ষক তার দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
সিভাসুর ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেখ আহমাদ আল-নাহিদ লেখেন, অভিনন্দন প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ স্যার। আপনি দেখিয়ে দিলেন কীভাবে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। আওয়ামী লীগের আমলে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পর পর ২ বার ৮ বছর উপাচার্য থাকার পর এই সময়ে আপনি আবার বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন। চাট্টিখানি কথা! কদিন আগেই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিচারের দাবিতে চিঠিও দিলেন।
ড. শেখ আহমাদ আল-নাহিদ তার স্ট্যাটাসে অভিযোগ করে আরও লেখেন, দীপু মনির উপাচার্য নিয়োগে ২ কোটি টাকা নেওয়ার কথাতো এখন টপ টপিক। দুর্ভাগ্যবশত আপনি তার এলাকার এবং আপনার সাথে তার সম্পর্কও ছিল মধুর। এতে আপনার দোষ কোথায়? আপনি নাকি সিভাসুর গত ভিসি নিয়োগে একজনের কাছ হতে টাকা নিয়ে আবার তার বিরুদ্ধেই কাজে লাগিয়েছেন। কতটা নেমকহারাম না হলে আপনার নামে এমন অভিযোগ করতে পারে? বাংলাদেশে যারা ভবিষ্যতে ভিসি হতে চায় আপনিই হতে পারেন তাদের আদর্শ। আপনার নামে কেউ খারাপ কিছু বললে কষ্ট লাগে। সব অপবাদ ঘুচিয়ে আপনি সিভাসু ও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবেন এই প্রত্যাশা রইল।
সিভাসুর শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান লেখেন, এখন তো প্রাইম মিনিস্টার নেই। প্রাইম মিনিস্টারের দপ্তরও নেই। তাই টাকা খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেবে, প্রাইম মিনিস্টার দপ্তরের সেই লোকগুলোও নেই। তাছাড়া সেটা তো এখন ভুতুড়ে বাড়ি! তাহলে কি ভূতেরাই...?
অভিযোগের বিষয়ে ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি একটি পদে নিয়োগ হওয়ার পর থেকে আমাকে নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সবই মিথ্যা। বিশেষ করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আমি কোনোদিন চিঠি দিইনি। আমার সই স্ক্যান করে সেখানে বসানো হয়েছে। তাছাড়া আমি ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না।
সই স্ক্যান করে বসানো নিয়ে জানতে চাইলে সিভাসুর এক শিক্ষক বলেন, ড. গৌতম কৃষিবিদদের ওই সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। এখন তিনি অস্বীকার করলে তো করার কিছু নেই। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দেওয়া বিবৃতি ওইসময় তার নামসহ দেশের প্রায়ই গণমাধ্যমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। যদি তিনি সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত না থাকতেন এবং তার সই যদি জাল ছিল, তাহলে তিনি প্রতিবাদ করেননি কেন?
এমআর/পিএইচ