তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খোলায় অসন্তুষ্ট অভিভাবকরা
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ খুলেছে স্কুল-কলেজ।তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, শিশুদের কথা বিবেচনা করে সরকার আরও অন্তত এক সপ্তাহ পরে স্কুল খুলতে পারত।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফুলার রোডে অবস্থিত উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে কয়েকজন অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানান।
আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে দীর্ঘ ছুটির পর রোববার সকাল ৮টা থেকে স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে। রোদ ওঠার আগেই অভিভাবকরা সন্তানকে পৌঁছে দিয়েছেন স্কুলে। গরমে সুস্থ থাকতে দিয়েছেন নানা উপদেশ। ক্লাসের বাইরে বের না হতে, মাঠে খেলাধুলা না করতে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্য সতর্ক করেছেন তারা।
উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ছাউনিতে সন্তানের ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন মমতাজ বেগম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এই গরমের মধ্যে স্কুল খোলাটা ঠিক হয়নি। কারণ, পড়াশোনার চেয়ে জীবন আগে। বর্তমান সময়ে গরমে বাসায় থেকেই জ্বর উঠে যাচ্ছে বাচ্চাদের। সরকার বলেছে রসালো ফল খেতে, অ্যাসেম্বলি না করতে— বাচ্চারা কি এটা মানবে? সপ্তাহখানেক পরে বা ১০ দিন পরে তো তাপমাত্রা কমেই যাবে, একটু অপেক্ষা করলে কী আর এমন হতো? আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা সমর্থন করছি না। তবে আমরা আর কী করতে পারি, জলে বসবাস করে তো কুমিরের সঙ্গে মারামারি চলে না।
তার কথা টেনে নিয়ে নাসরিন সুলতানা নামে আরেক অভিভাবক বলেন, এটার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে শনিবার স্কুল খোলা রাখা হয়েছে। যে সময়টাতে স্কুল বন্ধ থাকলেই ভালো হয় সেই সময়টাতে সরকার শনিবার খোলা রাখার কথা চিন্তা করল কীভাবে? আজ সকালে যখন বাচ্চাকে নিয়ে বাসা থেকে স্কুলে এলাম তখন সে একেবারে ঘামে ভিজে গেল। তো আপনি বলেন, সকাল সাড়ে সাতটার সময় যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে ১১টা-১২টার দিকে কী অবস্থা হতে পারে?
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাচ্চারা তো করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখন না হয় ১০-১৫ দিন অনলাইনে ক্লাস করত। এতে আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে যেত না।
শামসুন্নাহার নামে আরেক অভিভাবক বলেন, সরকারি অফিসাররা তো এসির মধ্যে বসে অর্ডার করে, এজন্য তারা এতকিছু বোঝেন না। তাদের উচিত স্কুলের সামনে এসে আমাদের মতো অপেক্ষা করা। তাদের বাচ্চারা যারা স্কুলে যায় তারা এসি গাড়ি দিয়ে যায়, তারা কী করে বুঝবে আমাদের কষ্ট। আমাদের বাচ্চারা চারতলা-পাঁচতলা পর্যন্ত ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে উঠছে। সঙ্গে এক লিটার পানি। এতকিছু নিয়ে বাচ্চারা উঠতে পারে? তাদের লিফটে উঠতে দেয় না। শিশুদের পড়াশোনার জন্য ৫ দিনই যথেষ্ট, আবার একদিন কেন বাড়াতে হবে।
ডেমরা থেকে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন মিথিলা সিদ্দিকী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রীষ্মকালের যে বন্ধটা ছিল সেটা তো পরিপূর্ণ হয়নি। এরমধ্যে শনিবারের ছুটিটা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আমরা অনেক দূর থেকে সন্তানদের এখানে পড়াতে নিয়ে আসি। একই সরকার দুই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকের স্কুল শনিবারে বন্ধ থাকবে আর আমাদের মাধ্যমিক স্কুল শনিবার খুলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন যে কারিকুলামটা দিয়েছে এটা কিন্তু আমরা বেশিরভাগ গার্ডিয়ানরা বুঝতেই পারি না। আমাদের বাইরের দেশের উদাহরণ দেওয়া হয়, ভালো কথা। তাহলে আগে বাইরের দেশের মতো অবকাঠামো তৈরি করা হোক? তারপর নতুন কারিকুলাম নিয়ে আসুক। আমরা সকালে এসে বাচ্চাকে দিয়ে যাব এবং বিকেলে এসে নিয়ে যাব। এভাবে গরমের মধ্যে এখানে বসে থাকতে হবে না।
এমএইচএন/জেডএস