এখনো ভর্তি হয়নি আড়াই লাখ শিক্ষার্থী
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে জন্য সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় গত ২৯ নভেম্বর থেকে। প্রথম তালিকার পর দুইটি অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আজ (বৃহস্পতিবার)। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এখনো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী।
যদিও স্কুলে আসন সংকট নেই বলে দাবি করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ভালোমানের স্কুলে ভর্তির প্রতিযোগিতা থাকায় সেখানে সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেনি, তারা আসন খালি থাকা স্কুলগুলোতে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে।
মাউশি বলছে, গত ২৮ নভেম্বর স্কুলে ভর্তির জন্য লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির জন্য মনোনয়ন পায় তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায় এক লাখ ৩৯ জন শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয় দুই লাখ পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। সেজন্য দুটি অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে আজ দুই ধাপে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। এরপর যেসব শিক্ষার্থী ভর্তির বাইরে থাকবে তারা সরাসরি ভর্তির সুযোগ পাবে।
স্কুলগুলোকে পাঁচদিনের মধ্যে মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি শেষ করতে হবে। এরপর প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করাতে হবে চারদিনের মধ্যে। আর দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করাতে স্কুলগুলো সময় পাবে তিনদিন। তবে এই তিন তালিকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য স্কুলগুলোর শেষ সময় ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
কেন্দ্রীয় লটারি অনুযায়ী, ভর্তি কার্যক্রমের শেষ দিনে দুপুর পর্যন্ত এখনো ভর্তি হতে পারেনি আড়াই লাখ শিক্ষার্থী। তবে স্কুলে কোনো আসন সংকট নেই। যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেনি তারা আসন খালি থাকা স্কুলগুলোতে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করে সবাই। সে কারণে এসব স্কুলে আসন সংকট মনে হয়। উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুলে আসন রয়েছে ১ হাজার ৬২১টি। কেন্দ্রীয় লটারিতে এই স্কুলে আবেদন করেছে ২০ হাজার ছাত্রী। অনেকেই শুধু এই স্কুলেই আবেদন করায় এখনো ভর্তির সুযোগ পায়নি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ভর্তির মৌসুম অভিভাবকদের অনুরোধ ও নানা চাপ সহ্য করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ লটারিতে নির্বাচিতদের বাইরে কাউকে ভর্তি করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ভর্তির জন্য অনেকে কেবল শিক্ষার্থী শুধু ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফরম নিয়েছে। ভর্তি না হতে পেরে তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। বোনের কোটায় আমরা মাত্র ১৫ শতাংশ আসন দিতে পেরেছি।
এদিকে, সন্তানকে পছন্দের স্কুলে ভর্তি করাতে না পেরে অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, কোথায় সন্তানদের ভর্তি করবেন, অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। সব স্কুলের মান যদি একই হতো, সেক্ষেত্রে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যেত। এক স্কুলে না হলে অন্য স্কুলে ভর্তি করতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হতো না।
মাউশি বলছে, প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আসন রয়েছে ১০ লাখ ৬০ হাজার নয়টি। কিন্তু সবাই চায় নির্দিষ্ট কয়েকটি স্কুলে ভর্তি হতে। তাই এই সংকট। যেসব স্কুলে আসন খালি আছে, সেখানে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, স্কুলগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে আসন খালি আছে। লটারিতে যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পায়নি, তারা আসন খালি থাকা স্কুলগুলোতে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে।
সরাসরি ভর্তিতে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম যুক্ত হতে পারেনি বা সরাসরি যেসব স্কুল শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে, তাদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি।
নির্দেশনার বলা হয়, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারি-প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারেননি, সেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি গ্রহণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল লটারি-প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন করবে। তবে সেক্ষেত্রে ডিজিটাল লটারির দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং মাউশির প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আবেদন ফরমের ফি (সরকারি ও বেসরকারি) কোনোক্রমেই ১১০ টাকার বেশি গ্রহণ করা যাবে না; প্রতি শ্রেণি/ শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৫৫ জন।
এনএম/কেএ