ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, বিএনপিসহ যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আনতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে নতুন ও তরুণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আনতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি এমনটা করা যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা এ দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের কঠোর জবাব দেওয়া যাবে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে একটি অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসার একমাত্র সদস্য প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে ইউজিসির দায়িত্ব পালন করছেন।
‘এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ সিনিয়র শিক্ষকদের ডাকা হয়। অনুষ্ঠানের ৩৫ জন শিক্ষক বক্তব্য রাখেন। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ বিরোধী দলের ডাকা হরতাল, অবরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে সক্রিয় রাখা যায় শুরুতে এ নিয়ে আলোচনা হলেও একপর্যায়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেশের রাজনীতি, বিএনপি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের কড়া সমালোচনা শুরু করেন।
প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আগামী জানুয়ারিতে আবার বিজয় উৎসব হবে। সেই নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে তরুণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য শিক্ষকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তিনি ভোটের আগে সব শিক্ষকদের ভোটারদের কাছে যেতে অনুরোধ জানান।
এসময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলসহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ভোটের আগে আরও সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানান।
আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই, ঘরে বসে গণতন্ত্র পাবেন এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভোট কেন্দ্রে না গেলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সামনের নির্বাচনে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ, উন্নয়ন, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বুঝিয়ে দিতে হবে। কীভাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে হয় শিক্ষক সমাজ সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শিক্ষকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
নির্বাচনের পর বিজয় উৎসব করা হবে জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, আমরাই আধুনিক একটি শিক্ষা প্রযুক্তিতে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। সেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয়। তাদের হাত ধরে একটি স্মার্ট ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, আজকের যে দলটি আন্দোলন করেছে তাদের জন্ম হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে। তাদের আদর্শে রয়েছে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস আর স্বাধীনতাবিরোধীতা। অন্যদিকে বাংলাদেশ চলছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার ওপর দিয়ে। সেই চেতনার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক করলে তাদের পতন অনস্বীকার্য। তারা রাজনৈতিক ময়দান থেকে বিলীন হয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে মশিউর রহমান বলেন, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা যাদের অন্যতম উদ্দেশ্য তারাই আমাদের ছবক দিতে আসছে। গাজা শিশু হত্যা হচ্ছে সেখানে আপনাদের বিবেক কোথায়? এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালে যেন স্বাধীন হতে না পারি সেজন্য সপ্তম নৌ বহর পাঠিয়েছিল। এবারও এবার দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে বিএনপি জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) উপ উপাচার্য খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি ভোট কেন্দ্র ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার টানা যায় তাহলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির জবাব দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজে কখনও রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে শিক্ষকদের বেশি সম্মান করে। এই জায়গা থেকে আমরা ভোটারদের কাছে যেতে হবে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অলোক কুমার পাল বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেশন জটের কমতে শুরু করছে ঠিক তখনই দেশে আবার হত্যা, আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত।
শিক্ষা কার্যক্রম যেকোনো মূল্যে চালু রাখতে সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর কামাল উদ্দিন, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য আলিমুজ্জামান, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এ. কিউ. এম. মাহবুব, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জিনাদ হুদা, বুয়েটের শিক্ষক মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এনএম/এমএ