উপাচার্যসহ তিন শীর্ষপদ ছাড়া চলছে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ তিন পদ খালি রেখে বছরের পর বছর কার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের দুই ডজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা দুটোই উপেক্ষা করছে তারা। এছাড়া উপাচার্য না থাকার পরও সনদ দিচ্ছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের ২৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং শিক্ষক সংকটও রয়েছে। শিক্ষার সঠিক মানদণ্ড ঠিক রাখতে না পারায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে ‘পাঠশালার’ মতো শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে মনে করছে ইউজিসি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য কোনো ফান্ড নেই এবং অল্পকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও সেটি ১০ লাখ টাকার কম।
আরও পড়ুন >> অনুমোদন পেল তিস্তা বিশ্ববিদ্যালয়
বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নির্দেশনা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। তারা বলছেন আগামীতে আইন না মানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষহীন ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়
সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, টাইমস ইউনিভার্সিটি, এপিআই ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র সৃজণকলা ইউনিভার্সিটি, রূপায়ণ শামসুজ্জোহা ইউনিভার্সিটি, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি, শাহ মাখদুম বিশ্ববিদ্যালয়, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের ভূমিকা অনেক। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদ শূন্য রেখে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড ঠিক রাখা সম্ভব নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ে সেখান থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করাটাও উচিত নয়।
এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে জানান, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া একটি লম্বা প্রক্রিয়া। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে লম্বা সময় লাগে বলে আমরা নির্ধারিত মেয়াদের চার মাস আগেই উপাচার্যসহ এসব পদের প্যানেল পাঠাতে বলি সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করে না। অনেক ইউনিভার্সিটি যে প্যানেল পাঠায় সেখানে আবার চাহিদামাফিক যোগ্য প্রার্থী থাকে না। প্রতিটি প্যানেল মন্ত্রণালয় হয়ে ইউজিসিতে আসে। ইউজিসি সেটা যাচাই-বাছাই করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয়ে আচার্যের দপ্তরে গিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
তিনি বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বছরের পর বছর এসব পদ ফাঁকা রেখে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এসব পদ পূরণ করতে তাগিদ দিচ্ছি, তবু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে না। এক্ষেত্রে আগামীতে ইউজিসি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবে। যারা নিয়ম মানছে না তাদের লাল তারকা চিহ্ন দিয়ে পৃথকভাবে শনাক্তের ব্যবস্থা করা হবে।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি মৌলিক দিক থাকে। ভালো শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং দক্ষ প্রশাসন এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন উপাচার্য একইসঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান। আমাদের দেশের আইনে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি একজন গ্রাজুয়েটের চূড়ান্ত সনদে সই করে থাকেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন দেখভালের জন্য একাধিক উপ-উপাচার্য থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে স্পষ্ট বলা আছে এখানে একজন উপাচার্য, একজন উপ-উপাচার্য এবং একজন ট্রেজারার থাকবেন। এ তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের মাধ্যমে নিয়োগ পাবেন। আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য থাকারও সুযোগ নেই। কিন্তু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ পদটিও অবলীলায় ব্যবহার করছে।
প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, সোজাসাপ্টা কথা হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রাস্টি বোর্ডই চায় না উপাচার্য থাকুক। কারণ সত্যিকারের যোগ্য এবং মেরুদণ্ড আছে এমন ভিসি থাকলে তাদের অনেক অনৈতিক আবদার রাখবে না। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ দিতেও বিড়ম্বনায় পড়বে। ফলে সংগত কারণেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এমনকি রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ফাঁকা থাকে। এছাড়া উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার রাখলে তাদের খরচও বাড়বে। নিয়োগ না দিয়েই যদি পার পাওয়া যায় তবে কেন নিয়োগ দেবে?
বিশটির মতো বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা আইনকানুন মেনে চলে, কিন্তু বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব আইনের ধার ধারে না। ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন নিয়ে তারা দুই তিনগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। খাতা কলমে ৫০ জন থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এ শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। একই অবস্থা নর্থ-সাউথসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই- বলেন প্রফেসর আবদুল মান্নান।
এমএম/জেডএস