তদবিরের চাপ ঠেকাতে ফোন বন্ধ রাখছেন প্রতিমন্ত্রী-সচিব-ডিজি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী/প্রধান শিক্ষকদের সিটি কর্পোরেশন অথবা আন্তঃসিটি কর্পোরেশন বদলি কার্যক্রম চলছে। উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় কার্যালয় হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি এখন মহাপরিচালকের দপ্তরে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল মহাপরিচালক অনলাইনে আসা বদলির আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে বদলির আবেদনের সার্ভার ডাউন রয়েছে। ফলে শিক্ষকরা তার আবেদনের স্ট্যাটাস দেখতে পারছেন না।
এদিকে, সিটি কর্পোরেশন অথবা আন্তঃসিটি কর্পোরেশন বদলি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তদবিরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। একই অবস্থায় এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের। তিনি মাঝে মধ্যে ফোন খুললেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখছেন। বিকল্প নম্বর দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে মন্ত্রণালয়ে সরেজমিনে প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বুধবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ তার দপ্তরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বদলিকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার জন্য এবার অনলাইনে করা হয়েছে। এরপরও যদি তদবির শুনতে হয় তাহলে অনলাইন করার কি দরকার ছিল।
তিনি বলেন, প্রচুর আবেদন, প্রচুর ফোন পাচ্ছি। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৮২টি শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি। এর মধ্যে অফিসিয়াল ডিও (আধা সরকারি পত্র) জমা পড়েছে ১৮৪টি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ফোন করে তদবির করছেন। বাধ্য হয়ে ফোন বন্ধ রেখেছি।
একই কথা বলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। তিনি বলেন, তদবিরে আমি অতিষ্ঠ। অর্ডার না হওয়ার পর্যন্ত ফোন বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় দেখছি না।
সভাকক্ষে উপবৃত্তি নিয়ে একটি চুক্তি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, বদলি নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না। আমি বিরক্ত। সচিব, মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন।
সার্ভার ডাউন
গত ৩ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৪ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান/সহকারী শিক্ষকদের অন্যত্র থেকে সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃসিটি কর্পোরেশন অনলাইন বদলি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষকরা অনলাইনে আবেদন করবেন। ৭ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, ৯ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং ১০ এপ্রিল বিভাগীয় উপ-পরিচালক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করে মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করবেন। মহাপরিচালক ১১ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে বদলির কার্যক্রম শেষ করে অর্ডার করবেন।
সে হিসাবে বুধবার এ বদলির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে অনলাইন বদলির সার্ভার ডাউন রয়েছে। ফলে কোনো শিক্ষক তার স্ট্যাটাস দেখতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে সবাই অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সার্ভার ডাউন করে রাখা হয়েছে। কারণ তদবিরের চাপে অতিষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক। তাই সার্ভার ডাউন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সার্ভার ওপেন করা হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, সার্ভার ডাউন আছে এটা জানি। কেন ডাউন সেটা অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবে।
যেভাবে বদলির আবেদন যাচাই-বাছাই হবে
বদলি আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পুরো প্রক্রিয়াটি বুয়েটের মাধ্যমে করা হচ্ছে। আবেদন করা শিক্ষকদের পাচঁটি ক্যাটাগরি দেখে একটি স্কোরিং নম্বর তৈরি করবে সফটওয়্যার। এ স্কোরে যারা এগিয়ে থাকবেন তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বদলি করা হবে।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলির ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে। সেগুলো হলো– সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থল, চাকরির আগে বিয়ে হয়ে থাকলে স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা, অসুস্থতা, চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা ও বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষকের পিতা বা বর্তমান স্থায়ী ঠিকানায় বদলির ওপর মার্কিং করা হবে। যেসব শিক্ষক সর্বোচ্চ নম্বর পাবেন, তারাই বদলির সুযোগ পাবেন।
একই স্কোর একাধিক শিক্ষকদের হলে সমাধান কীভাবে হবে এ ব্যাপারে সচিব বলেন, একই স্কোর একাধিক ব্যক্তির হওয়ার সুযোগ নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন একই দিনে চাকরিতে যোগদানসহ আরও চারটি শর্তের স্কোর একই রকম হলে তাহলে কীভাবে একজনকে বাছাই করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের জন্ম তারিখ দেখা হবে। এটা কখনো এক হবে না। তাই একই স্কোর হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রতি পদে বদলির জন্য ১৮৩ আবেদন
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, চার বছর বন্ধ থাকা পর এবার অনলাইনে বদলি চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগের বদলি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন আন্তঃসিটি কর্পোরেশনের বদলি কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিকের শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে রাজধানীতে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে। তবে ঢাকা মহানগরীতে শূন্যপদ রয়েছে ৮২টি। এর মধ্যে বাইরে থেকে রাজধানীতে বদলি হয়ে আসতে পারবেন মাত্র ১০ শতাংশ। সে হিসাবে রাজধানীতে শূন্যপদ ৮টি। কিন্তু আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি। আর দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনে শতাধিক পদে বদলির সুযোগ থাকলেও আবেদন পড়েছে প্রায় ৬ হাজার। তবে এই শতাধিক পদের জন্য শুধু মন্ত্রণালয়েই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ১৮৪টি ডিও (আধা সরকারি পত্র) জমা পড়েছে।
বৃহস্পতিবার ফলাফল
গত ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির আবেদন ১২ এপ্রিল নিষ্পত্তি করার কথা। কিন্তু নানা জটিলতা ও তদবিরের কারণে তা করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে গণশিক্ষা সচিব বলেন, বুধবার রাতের মধ্যে বদলির চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া চেষ্টা করছি। না পারলে বৃহস্পতিবার ফলাফল দেওয়া হবে।
এনএম/এসএসএইচ/