পুরো রমজানে ছুটি চান প্রাথমিকের শিক্ষকরা, আজ সিদ্ধান্ত
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বৃহস্পতি বা শুক্রবার থেকে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। এ উপলক্ষ্যে স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে রমজানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে, প্রাথমিক বিদ্যালয় রমজান মাসে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। আজ (বুধবার) এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।
শিক্ষকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে এ দাবির পক্ষে সরব হয়েছেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছে শিক্ষক সংগঠনগুলো। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছুটি সমন্বয় করতে সংগঠনের বাইরেও অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (ডিপিই) লিখিতভাবে আবেদন করেছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দীন গণশিক্ষা সচিব বরাবর লিখিত আবেদনে বলেন, রমজানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪ দিন খোলা থাকবে। চৈত্রের প্রচণ্ড গরমে রোজা রেখে ক্লাস নেওয়া শিক্ষকদের খুবই কষ্টসাধ্য হবে। ৮০ ভাগ নারী শিক্ষক সেহরি প্রস্তুত করে সংসারের কাজ করেন স্কুলে আসেন। সারাদিন স্কুল শেষে আবার ইফতারের সকল প্রস্তুতি ও সংসার পরিচালনা খুবই কষ্টকর হবে। তাছাড়া রমজান হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য পবিত্র কুরআন শিক্ষার উপযুক্ত মাস।
এ মাসে শুদ্ধ করে কুরআন শিখতে শিক্ষার্থী ১ থেকে ২৭ রমজান পর্যন্ত বিভিন্ন কুরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়। শিশুরা সাধারণত বিদ্যালয়ে না এসে কুরআন শিক্ষাকেন্দ্রে চলে যায়। তাই পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখবেন এটাই ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রত্যাশা।
আবেদনে আরও বলা হয়, রমজান মাসে সকালে গাড়ি, সিএনজি ও রিকশা কম চলাচল করায় দূরের বিদ্যালয়গামী শিক্ষকদের যানবাহন পেতে খুবই সমস্যা হবে। সকাল বেলা রাস্তাঘাট নিরিবিলি থাকার ফলে নানা ধরনের ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হতে পারেন। এসব বিষয় বিবেচনা নিয়ে প্রথম রোজা থেকে স্কুল বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, করোনায় পিছিয়ে পড়ায় শিখন ঘাটতি কাটাতে এবার রোজার ছুটি কমিয়ে আনা হয়েছে। শিক্ষকদের একাধিক সংগঠনের নেতাদের লিখিতভাবে রোজায় ছুটির দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ছুটি সমন্বয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা এলে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে ছুটি দেব।
তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোজার ছুটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একাধিক আলোচনা হয়েছে তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ এ বিষয়ে জানা যেতে পারে। তবে অধিকাংশ কর্মকর্তারাই অন্যান্য শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ছুটি দেওয়ার পক্ষে।
রমজানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি নিশ্চিত করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রায় ৬০ শতাংশ অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেন। ছুটি ভিন্ন হওয়ায় পারিবারিক ভ্রমণ, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটে। বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শাখা আছে, তাদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু আছে। এসব বিদ্যালয়েও পাঠদানে সমস্যা দেখা দেয়।
তারা আরও বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণ খুবই জরুরি। এ দাবির পক্ষে আমাদের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের কাছে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৪ দিন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৬ দিন ছুটি রয়েছে। তাই, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ৭৬ দিন ছুটি নির্ধারণের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
এনএম/ওএফ