৩৬ হাজার পদে ‘বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ দেবে এনটিআরসিএ
সারা দেশে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের শূন্যপদ আছে ৬৮ হাজারের বেশি। এ শূন্যপদ পূরণ করতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় গত ১২ ডিসেম্বর। দেড় লাখের বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করলেও প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য কাউকে সুপারিশ করতে পারেনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
তুলনামূলক কঠিন বিষয়ে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া, নারী কোটায় কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী না পাওয়া এবং চাকরিতে আছেন এমন ইনডেক্সধারীরা আবেদন করতে না পারায় বিশাল সংখ্যক পদ ফাঁকা রয়ে গেছে। এসব পদ পূরণ করতে কিছুটা ছাড় দিয়ে ‘বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এনটিআরসিএ।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট প্রকট। শূন্য ৬৮ হাজার পদ পূরণ করার জন্য ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু ইংরেজি, আইসিটি, বিজ্ঞান, মাদ্রাসার সহকারী মৌলভি এবং নারী কোটার সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ৩৫ হাজার ৭২৯টি পদে কাউকে সুপারিশ করতে পারিনি। এসব পদ পূরণ করতে কিছুটা ছাড় দিয়ে বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সারা দেশে শূন্যপদ পূরণ করতে গত ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ নিয়োগ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে দেড় লাখের বেশি আবেদন পড়ে। গত ১২ মার্চ এই ফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ৩২ হাজার ৪৩৮ জন নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন। ফলে এখনো ফাঁকা রয়েছে ৩৫ হাজার ৯৫২টি পদ।
নিয়োগ সুপারিশ না করার কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, চাকরিরত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ না দেওয়া, ইংরেজি, আইসিটি, বিজ্ঞান, মাদ্রাসার সহকারী মৌলভি এবং নারী কোটার সংরক্ষিত পদের যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া। এর মধ্যে ইংরেজিতে সাড়ে ৮ হাজার পদ শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন পড়ে মাত্র ৪ হাজারের মতো। বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে প্রায় ১০ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন পড়ে সাত হাজার। আইসিটি বিষয়ে আবেদন পড়েছে ৩ হাজার ১০০। এরপরও ৯শর বেশি পদ শূন্য। এভাবে মাদ্রাসায় মৌলভি পদে সাড়ে তিন হাজার ও নারী কোটায় ১৪ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়ে গেছে।
আবার বিজ্ঞপ্তি দিলে কীভাবে শূন্যপদ পূরণ হবে— জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান, এবার হয়ত কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। সেই কৌশল খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর আগে বিজ্ঞপ্তিতে নারী পদ বেশি ফাঁকা ছিল। এবারও তাই হয়েছে। এটা কীভাবে পূরণ করা যায় সেজন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হবে।
প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে মেধাক্রমে নিচে থাকা প্রার্থীরা নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এসব ভুল যাচাই করে প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ দিতে এনটিআরসিএকে স্মারকলিপি দিয়েছে একটি গ্রুপ। গত রোববার (১৯ মার্চ) এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানকে দেওয়া স্মারকলিপিতে ‘রোল নম্বর ব্লকজনিত’ কারণে তারা বাদ পড়েছেন বলে দাবি করেন। এ কারণে মেধাক্রমের ভিত্তিতে তারা দ্রুত নিয়োগের সুপারিশ করার দাবি করেন।
এনটিআরসিএ থেকে জানা গেছে, ৬৮ হাজার ১৬৭টি শিক্ষকের শূন্যপদের মধ্যে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ৫০৮ জন এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৩৬ হাজার ৮৮২টি শূন্য রয়ে গেছে। ১-১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনে পাস করা সর্বোচ্চ ৩৫ বছরধারীরা এ নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এনটিআরসিএর হিসাবে, এখন পর্যন্ত ১৬টি নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস প্রার্থীদের মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৮ জন চাকরি পাওয়ার যোগ্য। সংস্থাটির প্রাথমিক হিসাবে, এখন পর্যন্ত এক লাখ প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন এবং তারা একটি পারসোনাল আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ইনডেক্স) পেয়েছেন। সেগুলো ব্লক করে রাখায় ফ্রেশার (নতুন) হিসেবে চাকরির আবেদন করলেও রোল নম্বর একই হওয়ায় ভালো নম্বর এবং মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও চাকরির সুপারিশ পাননি তারা।
যে কারণ বিপুল পদ ফাঁকা
এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি গণবিজ্ঞপ্তিতে কাঙ্ক্ষিত পদের সমান সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না। এবার চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের সুপাারিশ না পাওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এর অন্যতম কারণ এবার চাকরিরত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ না দেওয়া। উদাহরণ দিয়ে এনটিআরসিএ বলছে, তৃতীয় বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ পাওয়া ৩৪ হাজার প্রার্থীর মধ্যে ইনডেক্সধারী প্রার্থীই ছিল ২১ হাজার ৮৭৩ জন। যা মোট নিয়োগের দুই-তৃতীয়াংশ। বাকি ১৪ হাজার ৬৬৭ জন নতুন সুপারিশপ্রাপ্ত। এরপর নির্ধারিত নারী কোটা। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৪ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়ে গেছে। এসব পদের যোগ্য নারী প্রার্থী না পাওয়ায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপর তুলনামূলক কঠিন বিষয়, যেমন— ইংরেজি, আইসিটি, বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভি পদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
এনএম/এসএসএইচ/