মনিপুর স্কুলে পাল্টাপাল্টি ছুটি ঘোষণায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর স্কুলে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দুটি গ্রুপের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ্বে স্কুলে পাল্টাপাল্টি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভাপতি বৃহস্পতিবার থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে শুধু আজ (বৃহস্পতিবার) এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এটা কিসের ছুটি এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই স্পষ্ট করেনি।
জানা গেছে, বুধবার (৮ মার্চ) অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন এক নোটিশে বৃহস্পতিবার থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমসহ সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন।
তবে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক’ জাকির হোসেন বুধবার আরেক নোটিশে সভাপতির দেওয়া ছুটির নোটিশটিকে ‘বিধিবহির্ভূত’ উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত তিন দিনের ছুটি থেকে শুধু বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেন। নোটিশে তিনি বলেন, রোববার (১২ মার্চ) থেকে যথারীতি শ্রেণি ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু থাকবে।
তবে কার নোটিশ চূড়ান্ত কার্যকর হবে সে ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসলেও ক্লাসে যায়নি। সকালে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহানা জাহান স্কুলে এসে দেখে মূল ফটকে দুই পক্ষের ছুটির নোটিশ টানানো। স্কুলের অন্যান্য ব্রাঞ্চেও একই অবস্থা দেখা গেছে বলে কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন। সামনে রমজান মাসে স্কুল এক মাস বন্ধ থাকবে। এর আগে স্কুলের এ ধরনের দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষা বোর্ডের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন অফিসিয়ালি বিষয়টি আমরা জেনেছি। কোনো কারণ ছাড়া এভাবে কেউ স্কুলের ছুটি ঘোষণা করতে পারেন না। সবাইকে এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২০ সালে তদন্ত করে বলেছিল মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে মো. ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ। এরপর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আরেক তদন্তেও বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি বিধিসম্মত হয়নি। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। কারণ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী একটি পক্ষ ফরহাদ হোসেনের পক্ষে।
এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেয় মাউশি। পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লেখা পত্রে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই ব্যবস্থা নিতে বলেছিল মাউশি। তবে পরিচালনা কমিটি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর ৬ মার্চ দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মূল বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান জাকির হোসেন। তখন একদল শিক্ষক তাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে গিয়ে আসনে বসান। পরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষকেরা এসে তাকে অভিনন্দন জানান। এ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওই দিন ক্যাম্পাসে পুলিশও আসে।
উল্লেখ্য, একসময় মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর তিনি আর সেই দায়িত্বে নেই। পরে তার পরিবর্তে পরে নেতৃত্বে আসেন তার মেয়ে রাশেদা আখতার। এখন সেই দায়িত্ব পালন করছেন এ কে এম দেলোয়ার হোসেন।
বক্তব্য জানার জন্য অস্থায়ী সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এনএম/ওএফ