কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ
কারিগরি শিক্ষার দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরির জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিটিই) ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি) দেশে মাস্টার প্রশিক্ষকদের জন্য প্রথমবারের মতো দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন (সিবিটিএন্ডএ) প্রশিক্ষণ (লেভেল-৫) আয়োজন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় এ কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) স্কিলস-২১ প্রকল্প।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন মাস্টার প্রশিক্ষকের অধীনে সারা দেশের ২৪ জন লেভেল-৪ প্রশিক্ষক ও মূল্যায়নকারী এতে অংশ নেন। রাজধানী ও এর আশেপাশে বিভিন্ন ভেন্যুতে গত ১৪ মার্চ থেকে এই আবাসিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার (১১ এপ্রিল) ছিল এর সমাপনী অনুষ্ঠান।
অনলাইন ও অফলাইনে ৩০ দিনের এ কোর্সে অংশগ্রহণকারী সবাই কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক। আগামী ১৫ ও ১৬ এপ্রিল প্রশিক্ষণ-পরবর্তী মূল্যায়ন শেষে তারা পরবর্তী এক বছর দেশের আরও ১৮০ জন শিক্ষক ও প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবেন। কারিগরি শিক্ষার্থীদের দক্ষতার মান বাড়াতে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে আরও মাস্টার প্রশিক্ষক তৈরি করবেন।
সোমবার বিকেলে ঢাকার টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য, সরকার গতানুগতিক ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষণ ব্যবস্থাকে কর্মক্ষেত্র উপযোগী দক্ষতা-ভিত্তিক (সিবিটিএন্ডএ) পদ্ধতিতে রূপান্তরে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণে দরকার মান-সম্পন্ন দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষাদানের মতো একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের অবশ্যই যুগোপযোগী পেশাগত দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে। শুধু পাঠদান নয়, কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উপকরণ তৈরি ও কার্যকর শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতেও তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলেই কারিগরি শিক্ষার্থীদের গুণগত মান ও পেশাদারিত্বের উন্নতি ঘটবে। শিক্ষার্থীরাও বুঝবে কারিগরি শিক্ষাই জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যম হতে পারে।
অনুষ্ঠানে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, প্রশিক্ষিত মাস্টার প্রশিক্ষকরা ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রশিক্ষক তৈরি করার মাধ্যমে তাদের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেবেন। এর মাধ্যমে তরুণদের দক্ষতা বাড়িয়ে কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধান হবে। আইএলও মাস্টার প্রশিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে পরবর্তী ধাপের (লেভেল-৬) জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতামান ও পাঠ্যক্রমের ধারাবাহিক উন্নয়নে কারিগরি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর।
সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কারিগরি ব্যবস্থার সামগ্রিক মান বাড়াতে আইএলওর স্কিলস-২১ প্রকল্প বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষক-প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ জন প্রশিক্ষক ও মূল্যায়নকারীর প্রশিক্ষণের উদ্যোগও রয়েছে।
স্কিলস-২১ প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি পরিবেশগতভাবে সচেতন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাজার-চাহিদা এবং আন্তঃসংযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। যা মূলত প্রভাব ফেলবে দেশি বিদেশি শ্রমবাজারে।
এএজে/আইএসএইচ