এমপিওভুক্তি নিয়ে জটিলতা নিরসন চান মাদ্রাসা শিক্ষকরা
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশ পেয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসায় যোগদান করলেও এমপিও নীতিমালার জটিলতার কারণে এমপিওভুক্তির আবেদন বাতিল হচ্ছে সহকারী শিক্ষক কৃষি (মাদ্রাসা) শিক্ষকদের।
জানা গেছে, নতুন এমপিও নীতিমালায় উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের ক্ষেত্রে বিএড না থাকায় এবং প্রাণীবিদ্যা বিষয় তুলে দেওয়ায় এসব শিক্ষকের এমপিওর আবেদন বাতিল করে দিচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
সম্প্রতি বিষয়টির সমাধান চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনটিআরসিএ বরাবর চিঠি দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক কৃষি (মাদ্রাসা) শিক্ষক। ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৪নং পয়েন্টে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৩৯০০/২০১৯ নং মামলার রায় অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১২ জুনের আগে যারা শিক্ষক সনদ লাভ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় আমরা সহকারী শিক্ষক কৃষি (মাদ্রাসা) পদে আবেদন করি এবং সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি।
আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহযোগিতায় এমপিও’র জন্য যথাযথ নিয়মে আবেদন করেছি। আমরা মাদ্রাসা এমপিও নীতিমালা ২০১৮ সালের আগে ২০১৫ সালের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক সনদ অর্জন করেছি। এমপিও নীতিমালা ২০১৮ সংশোধনীতে (২৩ নভেম্বর, ২০২০) প্রাণীবিদ্যা বিষয় সংযুক্ত নেই। কিন্তু ২০১৫ ও ২০১৮ সালের মূল নীতিমালায় এটি সংযুক্ত ছিল এবং আমাদের (১-১৪তম) নিবন্ধন সার্টিফিকেটে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্পষ্ট অক্ষরে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা উল্লেখ ছিল। তবে ১৫ ও ১৬তম নিবন্ধন সার্টিফিকেটে মাদ্রাসা উল্লেখ নেই। ফলে সবশেষ জনবল কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল প্রোগ্রামার থেকে আমাদের এমপিও ফাইল রিজেক্ট করে দেওয়া হয়েছে, যা গণবিজ্ঞপ্তির পরিপন্থি।
চিঠিতে তারা বলেন, করোনা মহামারির এ সময়ে আমরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। মানসিক এবং আর্থিকভাবে অনেক কষ্টে আছি। আমাদের অনেকেই ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের এমপিও ফাইল বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক কৃষি (মাদ্রাসা) শিক্ষকদের পক্ষে মোর্তুজা আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তৃতীয় নিয়োগচক্রে আমরা এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে বিভিন্ন মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক কৃষি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। কিন্তু এমপিও আবেদনের পর উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে বিএড না থাকায় এবং প্রাণীবিদ্যা বিষয় তুলে দেওয়ায় এমপিও ফাইলগুলো বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেকে দূর-দূরান্তে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা বিনা বেতনে কীভাবে অধ্যাপনা চালিয়ে যাবেন, প্রতিষ্ঠানে গিয়ে থাকবেন কীভাবে। দ্বিতীয় নিয়োগচক্রে এ সমস্যা দেখা দেওয়ায় একটি পরিপত্র জারি করে তাদের এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করে আমাদের এমপিও ফাইল গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, এটা মন্ত্রণালয়ের এমপিওভুক্তির বিষয়। তারপরও আমাদের কাছে যেহেতু চিঠি এসেছে, আমরা যাচাই-বাছাই করে এটি মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করব। এরপর সরকারি যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটাই বাস্তবায়ন হবে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমীন (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, ১-১৪তম নিবন্ধন সার্টিফিকেটে উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যা দুটি বিষয়ই ছিল। তবে সবশেষ নীতিমালায় প্রাণীবিদ্যা বিষয়টি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কেউ (১-১৪ তম নিবন্ধন সার্টিফিকেটধারী) আবেদন করলে যোগ্যতা নেই মর্মে ফাইল রিজেক্ট করা হচ্ছে। যাদের আবেদন রিজেক্ট করা হচ্ছে, তারা আর এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন না।
এএজে/এসএসএইচ