মৃত্যুর ২৮ বছর পর শেয়ারের অর্থ পাচ্ছেন জাহানারা ইমাম
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ‘শহীদ জননী’ জাহানারা ইমামের। মারা যাওয়ার ২৮ বছর পর শেয়ার ও লভ্যাংশের অর্থ ফিরে পাচ্ছে তার পরিবার। জাহানারা ইমামের পক্ষে এসব নেবেন তার ছোট ছেলে সাইফ ইমাম জামীর। লভ্যাংশসহ বিনিয়োগকৃত শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অর্থের চেক তুলে দেবেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ও পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’-এর বেশ কিছু শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন জাহানারা ইমাম। বর্তমানে কোম্পানিটি ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) রয়েছে। বর্তমানে প্রতি শেয়ারের দাম ১১০ টাকা। জাহানারা ইমাম ৬৫ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালে মারা যান।
সূত্র জানায়, জাহানারা ইমামের বিনিয়োগ করা শেয়ার এবং ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে শেয়ারের লভ্যাংশের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৪১০ টাকা, যা গত ২৮ বছর কোম্পানিটির কাছে ছিল। এখন অর্থ পরিশোধ করছে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলে (সিএমএসএফ)। তহবিলটি গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের কাছে শেয়ারগুলো আনক্লেইমড (দাবিহীন) ছিল। সিএমএসএফ গঠন হওয়ার পর নির্ধারিত সময় দিয়ে কোম্পানিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের অর্থ জমা দেওয়ার জন্য। কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ টাকা আমাদের ফান্ডে জমা দিয়েছে। আমরা আগামীকাল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলের কাছে এ অর্থ হস্তান্তর করব।
তিনি বলেন, সিএমএসএফের মাধ্যমে তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও তাদের উত্তরাধিকারীদের অর্থ দ্রুত পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) ৪০ জনের বেশি ব্যক্তিকে ৭০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হবে।
সিএমএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি ফান্ড ও ইনভেস্টর ক্লেইম স্যাটেলমেন্ট প্রোগাম অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাহানারা ইমামের এক লাখ ৪২ হাজার টাকাসহ মোট ৪২ বিনিয়োগকারীকে ৭০ লাখ টাকার ডেমু চেক দেওয়া হবে। পরে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হবে। এ ফান্ড গঠনের পর পাঁচ দফায় বিনিয়োগকারীদের এক কোটি টাকার বেশি দাবিহীনভাবে পড়ে থাকা টাকা বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়েছে।
জাহানারা ইমাম ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। বাংলাদেশে ‘শহীদ জননী’ হিসেবে তিনি পরিচিত। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’। একাত্তরে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং পরে নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে ‘সব মুক্তিযোদ্ধার মা’ হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রে তিনি শহীদ জননীর মর্যাদায় ভূষিত হন।
১৯২৯ সালের ৩ মে জাহানারা ইমাম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে মুসলমান পরিবারে জন্ম নেন। তার পিতা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মায়ের নাম সৈয়দা হামিদা বেগম। তিনি ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন মাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এমআই/আরএইচ