বিমার টাকা দিচ্ছে না সানলাইফ, চেয়ারম্যান-এমডির বিরুদ্ধে পরোয়ানা
কাজ না করলে বিধবা আলেয়া বেগমের খাবার জোটে না। মুরগির ডিম বিক্রি না করলে চলে না রুনা বেগমের সংসার। অন্যের বাড়িতে কামলা (কাজ করে) দিয়ে বেঁচে আছেন আব্দুল আজিজ গাজী। তাদের মতো ২০৩ জন হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের বিমার টাকা দিচ্ছে না সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের হতদরিদ্র এসব মানুষের পাওনা ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা।
পাওনা টাকার জন্য গত পাঁচ থেকে আট বছর ধরে কোম্পানির বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন গ্রাহক, এজেন্ট ও শাখা অফিসের কর্মকর্তারা। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো গ্রাহক ও এজেন্টরা ঘর-বাড়ি ছাড়া হয়ে ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়। এজেন্টদের মধ্যে কেউ হচ্ছেন মসজিদের ইমাম, কেউ শিক্ষক আবার কেউ ওষুধের দোকানদার। গ্রাহকদের জ্বালায় তারা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। করতে পারছেন না ব্যবসা কিংবা চাকরিও। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত হচ্ছে সালিশ-দরবার। সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন তারা। ফলে বিমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপায় না পেয়ে এজেন্ট ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের মির্জাগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা এখন কোম্পানির চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। পটুয়াখালীর আদালত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ড. রুবিনা হামিদ, সিইও মোহম্মদ নূরুল ইসলাম ও ডিএমডি সুমনা পারভীনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুবিনা হামিদ। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী শাবানা মালেক, ছেলে রাহাত মালেক ও বোন রুবিনা হামিদের স্বামী কাজী আখতার হামিদ। রুবিনা হামিদের আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ
২০০৭ সালের ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পশ্চিম সুবিদখালী ইউনিয়নের আলেয়া বেগমের পরিবার। ঘূর্ণিঝড়ে স্বামী হারিয়ে ছোট শিশুকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে থাকলেও নেই তার এক টুকরো জমি। এই অবস্থায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সেবা ফার্মেসির শফিকুল ইসলামের হাত ধরে সানলাইফের ১০ বছর মেয়াদি বিমা করেন। ৩৫ কিস্তিতে ১০০ টাকা করে ৩৫০০ টাকা জমা দেন।
জানতে চাইলে আলেয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সিডরের পর বিমা করি। হেরা (তারা) তো বলছে যে টাকা দিলে তার ডাবল পাব। সেই আশায় বিমার টাকা দিয়েছি। আমার স্বামী নাই, ছোড (ছোট) একখান পোয়া (ছেলে)। হে তো কোনো কাজ-বাজ করতে পারে না। আমি মানুষের বাসায় কাজ-বাজ করে এই টাকা জমাইছি। এখন টাকা দিচ্ছে না, আপনারা একটু ব্যবস্থা করে দেন।’
গোলখালী গ্রামের নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী কামলা দেয়। এক ছেলে-এক মেয়ে। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে খেতা সেলাইয়ের টাকা জমিয়ে ৪২ কিস্তিতে ৪২০০ টাকা জমা করি। এখন ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে। তাদের পড়াশোনা করামু। কিন্তু টাকার অভাবে পারছি না। অথচ আমার টাকা দিচ্ছে না কোম্পানি।’
মির্জাগঞ্জের দেউলী এলাকার বাসিন্দা রুনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তিন ছেলে-মেয়ে আমার। তাদের কথা চিন্তা করে নিজে না খেয়ে মুরগির ডিম বিক্রি করেছি, খেতা সেলাই করেছি। মানুষের বাড়ির কাজ-বাজ করে এই টাকা জমাইছি। ২০০ টাকার কিস্তির মাধ্যমে মোট ১০ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন আমার সেই টাকা দিচ্ছে না।’
‘ছোট সংসার। ছেলে-মেয়ের আশা-ভরসার কথা চিন্তা করে মুরগির একটা ডিমও খাইনি, কাপড় কিনিনি। এমনিতে দুই টাকা একসঙ্গে রাখা যায় না। এই বিমার উসিলায় কিছু টাকা এক করেছি। কোম্পানিতে টাকা জমা রেখেছি মাইয়া-পোলার লেখা-পড়ার জন্য।’
পাঁচ হাজার ৮০০ টাকা জমা দেওয়া একই গ্রামের আরেক বিমাকারী আব্দুল আজিজ গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিজে কৃষিকাজ করেছি। মানুষের বাড়িতে কামলা দিয়া টাকা জমা দিছি। অনেক কষ্টের টাকা বহু বছর আগে দিলাম। কিন্তু অহন (এখন) টাকা দেয় না। বিচার-সালিশ করেছি। কিন্তু পাচ্ছি না।’
‘বিমা করানোর সময় বলা হয় টাকা জমা দিলে ডাবল দেবে। এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা দিচ্ছে না। টাকার বই ছিল হেইডাও (সেটাও) নিয়ে গেছে। যেকোনো কায়দায় টাকা দিলে আমরা বাঁচতাম।’
নিরুপায় ইমাম-এজেন্ট
আলেয়া ও নাজমার বিমার এজেন্ট শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিডরের পর কোম্পানির অফিস ছিল আমাদের এলাকায়। এলাকায় আমার ফার্মেসি আছে। কোম্পানির লোকজনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গরিব মানুষের কথা ভেবে পলিসি করাই। কয়েক বছর পর দেখি কোম্পানির লোকজন আসে না। তখন উপজেলা অফিসে খোঁজ নেই। বলি, আমার জমানো টাকা ফেরত দেন। তারা জানান, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দেবে না।
‘গোলাখালী ও পশ্চিম সুবিদখালী এলাকার ৪৫ জন গ্রাহককে বিমা করিয়েছি। এখন গ্রাহকরা আমাদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। আমার মানসম্মান সব শেষ।’
মির্জাগঞ্জের দেউলী এলাকার মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই (৫৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কোম্পানির কর্মকর্তাদের আশ্বাসে এলাকার ৮৪ মানুষের পলিসি করায়। বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত/আট বছর হলো। এখন কোম্পানি শুধু ঘুরাইতেছে। গরিব-দুঃখী মানুষগুলোর টাকা দিচ্ছে না। তারা এখন আমাকে ধরছে। বলছে, টাকা এনে দিতে না পারলে আটকে রাখবে। এখন আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
জানা যায়, তিনি গাজী ও রুনা বেগমের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুখ দেখাতে পারছেন না শাখা ম্যানেজার
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের মির্জাগঞ্জ শাখার এরিয়া ম্যানেজার ওয়ালি উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০৭ সালে সিডরের আগে আমরা পপুলার লাইফের সঙ্গে কাজ করেছি। সিডরের পর কোম্পানির কর্মকর্তারা আমাদের এলাকায় আসেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে বিমাগ্রাহক ও এজেন্টরা পপুলারের চেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন। তারা কখনও বিমাদাবি
পরিশোধে গড়িমসি করবেন না। তাদের কথা মতো আমরা পপুলার বাদ দিয়ে সানলাইফের সঙ্গে বিমা করি।
‘পলিসিগুলোর মেয়াদপূর্তির আগ পর্যন্ত প্রধান অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে ভালোই আচরণ করেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলে বিমাদাবির টাকা দিতে নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০টির মধ্যে মাত্র ১৮টি বিমার টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ২০৩টি বিমাদাবি পরিশোধ করেননি। এখন কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের লোকজন আমাদের সঙ্গে ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মতো আচরণ করছেন। গ্রাহকদের টাকা দিতে না পারায় এজেন্ট ও গ্রাহকরা আমাকে এলাকা ছাড়া করেছেন।’
মির্জাগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখানকার মানুষ খুবই গরিব। কেউ ডিম কিংবা মুরগি বিক্রি করে, কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোম্পানিতে টাকা জমা রেখেছেন। এখন তারা টাকা দিচ্ছেন না। কষ্টার্জিত ওই টাকা জমা দিয়ে এখন গ্রাহকদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকায় থাকতে পারছি না। আর্থিক জরিমানা দিচ্ছি, সামাজিকভাবে অপমানিত হচ্ছি, শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি হচ্ছি। এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমন আচরণ দেখে নতুন করে কোম্পানিতে বিমা করানো বন্ধ করে দিয়েছেন এজেন্ট ও শাখা কর্মকর্তারা। তাদের পক্ষ থেকে সানলাইফের বিরুদ্ধে বিমাদাবি পরিশোধ না করার বিষয়ে অভিযোগ করেন মির্জাগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মনিরুজ্জামান। তিনি ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগে লেখেন, ‘আমার ব্যক্তিগত পলিসিসহ মোট ৪৯টি পলিসির জমাকৃত ১১ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকার জন্য ৩ আগস্ট ২০১৫, ১৫ মে ২০১৭ এবং ২৫ মে ২০১৭ সালে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করি। এমডি, ডিএমডি, সচিব (হিসাব শাখা) ও সার্ভিসিং শাখা টেবিলে ঘুরেও আজ পর্যন্ত আমাদের টাকা ফেরত পাইনি। ঢাকা থেকে মির্জাগঞ্জ আসা-যাওয়া করে উল্টো হাজার হাজার টাকা চলে গেছে। আশা করছি, অবহেলিত ও নির্যাতিত গরিব মা-বোনদের টাকা ফেরত পেতে আপনি সদয় হবেন।’
এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী গত রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, মির্জাগঞ্জের গ্রাহকদের আবেদন আমার চোখে পড়েনি। অনেক পুরোনো আবেদন, তারপরও আমি বিষয়টি দেখব।
‘কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সারাদেশ থেকে বিমাদাবি পরিশোধ না করার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানসহ বোর্ডকে ডেকেছি। তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি, দ্রুত বিমা নিষ্পত্তির জন্য পরিকল্পনা আইডিআরএকে জানাতে বলেছি। বিমাদাবি পরিশোধ না করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
লিগ্যাল নোটিশ ও আদালতে মামলা
প্রথম কোম্পানি, পরে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো সুবিচার না পেয়ে খোদ কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন মির্জাগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা। মোট ২০৩ গ্রাহকের পক্ষে আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশপ্রাপ্তির পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নোটিশে বর্ণিত গ্রাহকদের পাওনার টাকার কথা স্বীকার করেন।
কিন্তু বিমার টাকা পরিশোধ না করায় দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল আবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এবার লিগ্যাল নোটিশ রিসিভ করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। তৃতীয় দফায় অর্থাৎ একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে এবারও কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
কোনো উপায় না পেয়ে গত ১০ নভেম্বর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আদালতে মামলা করেন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের মির্জাগঞ্জ শাখার এরিয়া ম্যানেজার ওয়ালি উদ্দিন। মামলার সাক্ষীরা হলেন- সানলাইফের মির্জাগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মনিরুজ্জামান, গোলখালীর সফিকুল ইসলাম, দেউলীর আব্দুল হাই, দক্ষিণ মজিদ বাড়িয়ার আবুল কালাম আজাদ ও বেতাগী বরগুনার আবুল বাশার।
মামলায় আসামি করা হয়- সানলাইফের চেয়ারম্যান ডা. রুবিনা হামিদ, কোম্পানির সিইও ও এমডি নূরুল ইসলাম এবং কোম্পানির ডিএমডি সুমনা পারভীনকে।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীতে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের অফিস উদ্বোধনের সময় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে বিমার সুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালায়। পরবর্তীতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে অতি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে ২০৩ জনের নামে বিমা করায়। ওই ২০৩ জন বিমাগ্রাহক ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা আল-ইত্তেহাদ বিমাবাবদ জমা দেন।
এরপর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মির্জাগঞ্জ অফিসের কার্যক্রম শিথিল করে প্রকাশ করে যে বিমাগ্রহীতাদের জমা দেওয়া টাকা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।
আসামিদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাদীপক্ষ সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় বিমার টাকা দাবি করে দরখাস্ত করেন। অনেক ঘোরানোর পরও আজ পর্যন্ত ২০৩ জন বিমাগ্রাহকের ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। টাকা ফিরে পেতে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সালের ১০ মে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
আসামিরা শুধুমাত্র ২৭ ফেব্রুয়ারি নোটিশের জবাব দিয়ে বর্ণিত বিমাগ্রাহকদের পাওনা বিমাবাবদ জমা দেওয়া টাকা পরিশোধ করবে বলে নোটিশের জবাবে স্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিমাগ্রহীতাদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় বাদীপক্ষ পুনরায় ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু আসামিরা আজ পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।
আসামিরা এভাবে অর্থবিত্তহীন ও অসহায় মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে— এমন প্রলোভন দেখিয়ে বিমার টাকা অন্যায়, অসাধু ও প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করবে জানলে কখনই টাকা জমা দিতাম না— উল্লেখ করা হয় নোটিশে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আদালত ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। গত ৭ জানুয়ারি মির্জাগঞ্জ থানার কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা আসামিরা অন্যায়, অসাধু ও প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করায় দণ্ডবিধি ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। যা প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি শুনানি শেষে পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আদালত থেকে ১৮ জানুয়ারি তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
যা বলছেন বনানী থানার ওসি
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয় ঢাকার বানানীতে অবস্থিত। এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের থানায় এখনও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান কিংবা এমডির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার চিঠি আসেনি। পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় আসবে, তারপর আমাদের কাছে পৌঁছাবে।
তিনি আরও বলেন, কোম্পানিটির চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বিরুদ্ধে এর আগেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এসেছে।
বিমাদাবির টাকা ও মামলার বিষয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিমাদাবির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। আমার বিরুদ্ধে কিংবা আমার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আসেনি। আপনি বললেন, আমি শুনলাম। আমি কোম্পানির সিইওকে বিষয়টি অবহিত করব। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব।’
এর আগে ২০২১ সালে গ্রাহকদের দায়ের করা প্রতারণা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুবিনা হামিদ, কোম্পানির তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম, বর্তমান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসলাম রেজা, এএমডি (অর্থ ও হিসাব) মো. সাইদুর রহমান রনি এবং কোম্পানি সচিব মো. রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মোর্শেদ পৃথক দুটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এমআই/এমএআর/