চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে রাস্তায় ব্যাংকাররা
খরচ কমানোর নামে করোনার সময় কর্মী ছাঁটাই করেছে অনেক ব্যাংক। আবার বিভিন্নভাবে অনেককে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করা হয়েছিল। পরে চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া এসব কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা মানছে না ব্যাংকগুলো।
এমন অবস্থায় হারানো চাকরি ফিরে পেতে বুধবার (১৫ জুন) রাস্তায় নেমেছেন ব্যাংকাররা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
ছাঁটাই ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংকাররা জানান, করোনার সময় অন্যায় ও অমানবিকভাবে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ছয় হাজারের মতো কর্মীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য ও ছাঁটাই করে।
তারা আরও জানান, বেআইনিভাবে পদত্যাগে বাধ্য ও ছাঁটাই করা কর্মকর্তাদের বহালের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তপূর্বক প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সার্কুলার (বিআরপিডি সার্কুলার নং- ২১ তারিখ ১৬-০৯-২০২১) জারি করেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করার পরও অনেক ব্যাংক তাদের কর্মীদের বহাল করছে না।
‘অন্যায় চাকরিচ্যুতিতে ব্যাংকগুলোর উন্নয়নে অবদান রাখা কয়েক হাজার অভিজ্ঞ ব্যাংক কর্মকর্তা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তাগাদা দেওয়ার পরও বেশির ভাগ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা সার্কুলার অনুযায়ী কর্মীদের বহালে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান আসেনি।’
তাই বাধ্য হয়ে আমাদের এ প্রতিবাদ। আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে আবেদনকারী কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের ব্যবস্থা করা।
মানববন্ধনে এমটিবি থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শওকত বলেন, ‘এইচআর থেকে ডেকে নিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। কারণ জিজ্ঞেস করলে এইচআর বলেন, আপনার কোনো সমস্যা নেই। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপনাকে চাচ্ছে না। আপনি অন্য কোথাও চাকরি দেখেন। এরপরও আমি পদত্যাগ না করায় আমাকে ডেকে নিয়ে বলা হলো, পদত্যাগ না করলে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না। এমন হুমকিতে পদত্যাগে বাধ্য হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। এর প্রতিদান হিসেবে চাকরি হারালাম। আমার চাকরির বয়স প্রায় শেষপর্যায়ে। এখন আমাকে কে চাকরি দেবে? আমাদের একটাই দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
এবি ব্যাংক থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া এক নারী কর্মী জানান, কোনো অভিযোগ ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে আমাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। করোনার সময় নতুন করে চাকরিও পাইনি। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের চাকরি পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। নিয়ম মেনে আমি পুনর্বহালের আবেদন করেছি। একবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা রিয়াদ খান বলেন, ‘সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এইচআর ডিপার্টমেন্ট থেকে জোরপূর্বক বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে।’
‘বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হওয়া কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে। ওই নির্দেশনার নয় মাস পার হতে চলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা চাকরি পাইনি। আমারা চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের একটাই দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী চাকরিতে পুনর্বহাল করুক।’
ব্যাংকারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই বিষয়ে বিশেষ পরিদর্শনে নামে। পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলোর মোট তিন হাজার ৩১৩ জন কর্মকর্তা ‘স্বেচ্ছায়’ চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে বয়স থাকার পরও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৭০ জনকে। এছাড়া ২০১ জনকে অপসারণ, ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো বেশির ভাগই জানিয়েছেন, পদত্যাগের জন্য মৌখিকভাবে তাদের একটি সময় দেওয়া হয়েছিল। ওই তারিখের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না— এ ভয় দেখানো হয়। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়ে তারা পদত্যাগ করেন।
এরপরই ব্যাংক কর্মীদের ছাঁটাই বন্ধে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, এখন থেকে সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। পাশাপাশি মহামারি কোভিডকালীন চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংককর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসআই/এমএইচএস