রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হয়নি, ১৯ অভিযুক্তের ২টিকে অব্যাহতি
২০১৬ সালে চুরি যাওয়া রিজার্ভের কিছু অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্টে ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ফিলিপাইনের দুটি ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মূল অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান আরসিবিসিসহ বাকি ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা এখনো চলমান আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ সরানো হয়েছে বলে বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তাই নিউইয়র্ক আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ইতিবাচক রায় দেবেন বলে নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান আশা করছে।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিক এক ‘অবহিতকরণ’ পত্রে এমন তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রিজার্ভ চুরির মামলা আরসিবিসিসহ ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা হয়। তাদের মধ্য থেকে ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাওয়াই নামে দুটি ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দিয়েছেন নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট। মামলা পুরোপুরি খারিজ করা হয়নি। তাই মূল অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা চলবে।
নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট গত ৮ এপ্রিল এক রায়ে ‘এখতিয়ার না থাকার’ কথা উল্লেখ করে ফিলিপাইনের ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাওয়াই নামে দুটি ক্যাসিনোকে অব্যাহতি দেন।
এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরসিবিসি, লোরেঞ্জো টান, রাউল টান ও কিম অং নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্টে আলাদা আলাদা আবেদন করেন।
গত বছরের ১৪ জুলাই ব্লুমবেরি, ইস্টার্ন হাওয়াই ও কিম জংয়ের অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি হয়। ওই শুনানির ভিত্তিতেই গত ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায় ঘোষণা করেন নিউইয়র্কের বিচারিক আদালত। আদালত বলেছেন, বিচারের পর্যাপ্ত এখতিয়ার না থাকায় ব্লুমবেরি রিসোর্টস কর্পোরেশন মামলা খারিজ করে দিতে যে আবেদন করেছিল তা মঞ্জুর করা হয়েছে।
আংশিক এই রায়ে ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাওয়াইকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও কিম জংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনো রায় ঘোষণা করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, মামলার মূল অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আদালত রায় দেবেন।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের বড় অংশ এখনো ফেরত আসেনি। এ ঘটনায় প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করেছিল। সেই আদালত আরসিবিসির ‘মোশন টু ডিসমিস’ আবেদন খারিজ করেছিলেন।
সেই আদেশে বলা হয়েছিল, এই চুরি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে সংঘটিত হয়েছিল। জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডারসহ বিভিন্ন হিসাবে অর্থ স্থানান্তর—এ সবকিছু সন্দেহাতীতভাবে নিউইয়র্কে সংঘটিত হয়েছিল।
আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নিযুক্ত আইনি প্রতিষ্ঠান আশা করছে, মামলার মূল আসামি আরসিবিসির ‘মোশন টু ডিসমিস’ আবেদনের বিষয়ে নিউইয়র্কের আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ইতিবাচক রায় দেবেন।
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করেন হ্যাকাররা। শেষ পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
এসআই/আইএসএইচ/জেএস