ট্যাক্স দিতে গিয়ে লোকে হয়রানির শিকার, জেনেও স্বীকার করে না এনবিআর
ট্যাক্স দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন, তবে তা জেনেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্বীকার করে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, এটা (হয়রানি) এনবিআর প্রধান কার্যালয় থেকেই হচ্ছে। নালিশ করলে কিছু কিছু কাজ হয়। তবে বেশিরভাগ সময় কাজ হয় না।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিসিসিআই সভাপতি সমসাময়িক অর্থনীতি বিষয়ক ১০টি বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২২ সালে ডিসিসিআইর কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
এ বছর ঢাকা চেম্বার সিএমএসএমই, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআই, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল এনগেইজমেন্ট, কর ব্যবস্থাপনা এবং এলডিসি উত্তরণের বিষয়ে জোর দেয় ডিসিসিআই।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়- এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, কর দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনারা হয়রানির কথা বলেন, কিন্তু লিখিত অভিযোগ করেন না কেন? তাহলে কি ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দেয়?
এর উত্তরে রিজওয়ান রহমান বলেন, ট্যাক্স দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন এটা এনবিআরও জানে। হয়তো তারা স্বীকার করে না। এটা প্রধান কার্যালয় থেকেই হচ্ছে। নালিশ করলে কাজ হয় না, সে কথা বলব না। কিছু কিছু কাজ হয়। তবে বেশিরভাগ সময় কাজ হয় না।
তিনি বলেন, সব ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দেয়- এটা বাজে কথা। কিছু ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। সব ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দেয় যদি আপনি বলেন, তাহলে ব্যবসায়ীরা কালকে বলবে সব সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ নেয়। আপনি একজনের জন্য সমগ্র কমিউনিটিকে খারাপ বলবেন না।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি আরো সহজীকরণ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনো বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে আরো বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার উপর জোরারোপ করে সমুদ্র অর্থনীতিকে তিনি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপিতে এখাতে অবদান রয়েছে ৩.১ শতাংশ। এ সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি কার্যকর রূপকল্প প্রণয়নে দাবি জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে, এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেগোসিয়েশনের দক্ষতা আরো বাড়ানো জরুরি। সেই সাথে এফটিএর উপর আমাদের অধিক হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে, বিশেষ করে বিদ্যমান করকাঠামোর প্রতিবন্ধকতা নিরসন ও যুগোপযোগীকরণ, ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য সম্প্রসারণে নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরা দিতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ডিজিপির ২১.২৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এডিআইর পরিমাণ ছিল ২.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এমতাবস্থায় বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআই বৃদ্ধিতে কর্পোরেট কর কাঠামোর সংস্কার, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে সকল ধরনের সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, একমাত্র অটোমেশনই পারে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য খাতে সকল প্রকার দুর্নীতি রোধপূর্বক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে।
কর্পোরেট করের বিষয়ে তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের পূর্বে বাংলাদেশের কর্পোরেট কর হার আঞ্চলিক দেশসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তিনি বিদ্যমান কর্পোরেট কর ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ৭.৫ শতাংশ হারে ক্রমান্বয়ে হ্রাসের আহ্বান জানান।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, এলডিসি উত্তরণের পর আমাদের রপ্তানিমুখী পণ্যের উপর শুল্ক হার বর্তমানের চেয়ে ৬-৭ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে এখন থেকে আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণের সাথে সাথে বাজার সম্প্রসারণের উপর মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের প্রতি আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালে আমাদের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৩ শতাংশ এবং পণ্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে বেশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরমান হক এবং সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/এইচকে