রড-পাথরের চড়া দামে বিপাকে নির্মাণ খাত
রড-পাথরের চড়া দামে বিপাকে পড়েছে নির্মাণ খাত। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি দরপত্রে দাম সমন্বয়ের বিধান রাখার দাবি জনিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
রোববার (২৮ নভেম্বর) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
মহামারি ধকল কাটিয়ে উঠে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবার সঙ্গে সঙ্গেই নির্মাণ খাতেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিলেন এখাতের শিল্পোদ্যোক্তারা। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর অব্যাহত দাম বৃদ্ধিতে তারা উল্টো বিপাকে পড়েছেন।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বলছে, গত চার থেকে পাঁচ মাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রড, পাথর, ইট, বালু, থাইগ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, এসএস পাইপ, ইনডোর ফিটিংসসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীও। ফলে লোকসানে পড়ছে নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন ভালো মানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) এক টন রডের দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকা। এর আগে দেশে রডের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ২০০৭ সালের নভেম্বরের দিকে। সে সময় রডের টন ছিল ৮০ হাজার টাকা।
রডের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে তেল ও গ্যাসের দাম। পাশাপাশি বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। সব মিলিয়ে রডের কাঁচামাল আমদানি করে আনতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া চাহিদাও বেড়েছে। মূলত এসব কারণেই রডের দাম বেড়েছে। এতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এই নির্মাণসামগ্রীর দাম।
এমন অবস্থায় করনীয় ঠিক করতে শনিবার বৈঠকে বসে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্মাণ খাত বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি।
বৈঠকে উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা বলেন, সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধির কারণে, আগে থেকে করা চুক্তির মূল্য অনুযায়ী নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও অনেক সময়ই দরপত্র জমা দেয়ার পর অগ্রিম কর ও ভ্যাটের হারসহ সরকারের আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে সরকারি দরপত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের বিধান বা প্রাইস ভ্যারিফিকেশন ক্লজ থাকা উচিৎ বলে মনে করে এফবিসিসিআইয়ের নির্মাণ খাত বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। নির্ধারিত সময়ের ৫৬ দিন পার হলে, দেরিতে টাকা পরিশোধের বেলায় সুদ আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের বেশিরভাগ প্রকল্পই বিদেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে, তাই স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর দরকার। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য এফবিসিসিআই সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেবে বলে আশ্বাস দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম, রেজাউল করিম রেজনু, পরিচালক এবং নির্মাণ খাত বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ প্রকৌশলী গোলাম মো. আলমগীর, কমিটির চেয়ারম্যান ও স্পেকট্রা লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খান মো. আফতাবউদ্দীন, কো-চেয়ারম্যান ডিয়েনকো লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী এস.এম খোরশেদ আলম, ডিবিএল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের এমডি মো. আব্দুল জব্বার, স্টারলাইফ সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী শফিকুল হক তালুকদার, জেমস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের এনায়েত উল্লাহ সিদ্দিকী এবং কমিটির সদস্য ও এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সিইও প্রকৌশলী রবিউল আলম, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের এমডি রিজওয়ান মুস্তাফিজ, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যাডভাইজরস লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী, এসএআরএম অ্যাসোসিয়েশনস লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী এসকে. মাসুম মো. সালাহউদ্দীন, নেক্সট স্পেসেস লিমিটেডের এমডি বিমল চন্দ্র রায় ও ফিউচার ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিইও ক্যাপ্টেন হাসিব।
এসআই/আইএসএইচ